• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

আরজি কর কাণ্ডে সন্দীপ-সহ ৭ জনের পলিগ্রাফ টেস্ট, জানুন এই পরীক্ষার খুঁটিনাটি

সম্প্রতি 'পলিগ্রাফ টেস্ট' শব্দটা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, সৌজন্যে আরজি কর কাণ্ড।

সম্প্রতি ‘পলিগ্রাফ টেস্ট’ শব্দটা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, সৌজন্যে আরজি কর কাণ্ড।সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডাঃ সন্দীপ ঘোষ এবং আরও ৬ জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করার অনুমতি দিয়েছে শিয়ালদহের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত (অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট)।

কিন্তু, এই পলিগ্রাফ টেস্ট বা পলিগ্রাফ পরীক্ষা ব্যাপারটা ঠিক কী?

পলিগ্রাফ টেস্ট, বা যা ‘লাই ডিটেক্টর টেস্ট’ বলে অধিক পরিচিত, তা মূলত ব্যবহৃত হয় অপরাধের তদন্তের কাজে – অভিযুক্ত মিথ্যে বলছেন কিনা, সেটা বোঝবার উদ্দেশ্যে।

এই পরীক্ষার সময়ে অভিযুক্তের শরীরে নানা ইলেকট্রোড, যন্ত্র ইত্যাদি বসানো হয়, যার সাহায্যে হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, নাড়ির গতি, স্নায়ুর চাপ ইত্যাদি সমানে পরিমাপ করা হতে থাকে। এগুলোকে রেখচিত্রের (গ্রাফিকাল) সাহায্যে দেখানো হয়, যেটা দেখে পরবর্তীতে তদন্তকারীরা অনুমান করতে পারেন, অভিযুক্ত মিথ্যে বলছেন কিনা। প্রতিটা প্রশ্ন করার সময়ে এবং তার উত্তর দেওয়ার সময়ে অভিযুক্তের নানা শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয়, এবং সেগুলো গ্রাফে ধরা পড়ে।

সাধারণত, মিথ্যে কথা বলার সময়ে মানুষ অস্বস্তিবোধ করে, যেগুলোর ফলে শারীরিক নানা পরিবর্তন এই পরীক্ষার রিপোর্টে উঠে আসে। দ্রুত হৃৎস্পন্দন, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি দেখে এগুলো বিচার করা হয়। এছাড়া, অভিযুক্ত ঘামছেন কিনা, বা কোনও বিশেষ প্রশ্ন শুনে তাঁর বিশেষ কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা, এগুলোও লক্ষণীয়।

এক্ষেত্রে যদিও কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, যেমন জ্বর হলে, বা অন্য কোনও অসুখ থাকলে পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয় না, যেহেতু শারীরিক নানা কারণে রিপোর্টের ফলাফল যথাযথ আসবে না। সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে, কোনও বিশেষ ওষুধ বা স্টেরয়েডের প্রভাবে না থাকলে তবেই এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। অনেকসময়ে অভিযুক্তকে কিছু না খাইয়ে ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা রাখা হয়, শুধুমাত্র গ্লুকোজ বা স্যালাইন দিয়ে – এতে বহুক্ষেত্রে ফলও মিলেছে।

এছাড়া, এই পরীক্ষার জন্য যথাযথ কারণ সমেত আদালতের এবং অভিযুক্তের অনুমতি নেওয়া হয়। যদি ব্যক্তি অনুমতি না দেন, তবে আদালত যা সিদ্ধান্ত নেবে, তাই হবে।

পলিগ্রাফ পরীক্ষা চলাকালীন সবাই থাকতেও পারেন না – শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ফরেনসিক মনোবিদ থাকতে পারেন, আর অনুমতিসাপেক্ষে অভিযুক্তের উকিল বা পরিচিত কেউ।তদন্তকারী অফিসার বা পুলিশের কেউ থাকতে পারেন না, কারণ এই পরীক্ষার জন্য অভিযুক্তের পক্ষে শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন পরিবেশ প্রয়োজন।

যদিও, পলিগ্রাফ পরীক্ষা কতটা ফলপ্রসূ, এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, তদন্তকারীদের ভুল পথে চালিত করতে পারেন কোনও পাকা মাথার অপরাধী। তবে, অনেকসময়ে কাজেও দেয় এই পদ্ধতি, নানা অজানা বা মোড়ঘোরানো তথ্যও উঠে আসে এই পরীক্ষার মাধ্যমে।