বিষাক্ত স্যালাইন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জোড়া মামলা দাখিল হলো। খারাপ মানের স্যালাইন ব্যবহারে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে একাধিক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ইস্যুতে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে দুটি জনস্বার্থ মামলার আবেদন জমা পড়ে। একটি আবেদন করেছেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এবং অন্যটি আইনজীবী কৌস্তভ বাগচি। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ দু’টি মামলাই গ্রহণ করেছে।
জানা গিয়েছে, ফিরোজ এডুলজির মামলার শুনানি হবে আগামী বৃহস্পতিবার। আইনজীবী এডুলজি আদালতে উল্লেখ করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের একটি সংস্থার তৈরি স্যালাইনের মান খারাপ হওয়ায় কর্নাটকে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছিল। তখন কর্নাটক সরকার ওই সংস্থাকে ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করে এবং স্যালাইন সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয়। একই সংস্থার তৈরি স্যালাইনের কারণে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গেও মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এক দিনে পাঁচ প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে মামনি রুইদাস (২২)-এর মৃত্যু হয়। বাকি চার জনের মধ্যে তিন জনকে গ্রিন করিডর করে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে আনা হয়। খারাপ মানের স্যালাইন নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল গত ১০ ডিসেম্বর ওই স্যালাইনের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দিলেও অভিযোগ উঠেছে, জানুয়ারিতেও ওই স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম স্বীকার করেছেন যে, ‘কর্নাটক সরকার যখন ওই সংস্থাকে ‘ব্ল্যাকলিস্ট’ করেছিল, তখনই রাজ্য সরকার ওই নির্দেশ কার্যকর করেছিল। কিন্তু তার পরেও স্যালাইনের ব্যবহার বন্ধ না হওয়ায় আইনজীবী এডুলজি বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেন, “সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি দেখেছি।
রাজ্য সরকার সম্ভবত কোনও পদক্ষেপও করছে।” এই পরিপ্রেক্ষিতে স্যালাইন-কাণ্ডের জল কোন দিকে গড়ায়, তা এখন সময়ই বলবে। এরই মধ্যে জোড়া মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে।’ রিঙ্গার ল্যাকটেট’ নামে ওই বিশেষ স্যালাইন নেওয়ার পরই প্রসূতির মৃত্যু হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে তিন মা। চারদিন পরও তাদের মুখে কথা নেই, পেট ফুলে যাচ্ছে ক্রমশ। এবার সেই স্যালাইন নিয়েই জনস্বার্থ মামলা হল কলকাতা হাইকোর্টে। জোড়া মামলা দায়েরের অনুমতি দিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির টি এস শিবজ্ঞানম। আগামী বৃহস্পতিবার প্রথম মামলার শুনানি হবে বলে জানা গিয়েছে। গত ২০২৪-এর মার্চ মাসেই কর্নাটক সরকার এই স্যালাইন প্রস্তুতকারী সংস্থাকে নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ করেছিলেন। ওই রাজ্যে চার প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। তারপরই নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। ডিজিসিআই-কে চিঠিও দিয়েছিলেন ওই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেই স্যালাইন নিষিদ্ধ করার পরও এরাজ্যে কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘বিষাক্ত’ স্যালাইন? সেই প্রশ্ন তুলে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। চলতি মাসেও আরজি কর হাসপাতালে এই স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি মামলাকারীর।
উল্লেখ্য, মেদিনীপুরের ঘটনার পর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হাসপাতালগুলিতে নির্দেশিকা পাঠানো হয়। তারপর ওয়ার্ড থেকে স্যালাইন সরানো শুরু হয়। আগামী বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি রয়েছে।