শহর কলকাতার দেড়শো বছরের গণপরিবহণের ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী ট্রাম, যা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে শহরের বুকে। সম্প্রতি রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানান, গতির সঙ্গে তাল রাখতে গিয়ে শহরে একটি মাত্র রুট ছাড়া আর কোথাও ট্রাম চালানো সম্ভব হবে না। এরপরই রব ওঠে, তাহলে কি বাস্তবেই ট্রাম চিরতরে বিদায় নিতে চলেছে কলকাতার রাজপথ থেকে? তবে জনসাধারণের আক্ষেপের অবসান ঘটিয়ে ট্রামের গতিপথ প্রসঙ্গে নয়া পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। হতে চলেছে কিছু নতুন ঘোষণা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিপুল সমস্যা থাকা সত্ত্বেও কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রাম সম্পূর্ণরূপে বন্ধের পথে হাঁটছে না রাজ্য। ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য হেরিটেজ ট্রাম রুট খোলা থাকবে, যেখানে পর্যটক থেকে কলকাতাবাসীর সঙ্গে জুড়ে থাকবে নস্টালজিয়া। পাশাপাশি, শহরের নবনির্মিত অঞ্চলেও ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সূত্রের খবর, শহরের নতুন ফাঁকা এলাকা এবং যেখানে রাস্তা বেশ চওড়া, সেখানেই ট্রাম চালানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবহণ দপ্তরের অভ্যন্তরীন আলোচনায় উঠে এসেছে নিউটাউনের নাম। মেট্রোর ‘ফিডার’ হিসেবে ট্রামকে কাজে লাগাতে চাইছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সুতরাং ট্রামকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া নয়, বরং ট্রামের হাত ধরেই গণপরিবহণের নতুন দিশা উন্মোচনের পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রী তথা পরিবহণ দপ্তরের।
প্রসঙ্গত, আংশিকভাবে ট্রাম বন্ধের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। কলকাতার রাস্তায় জায়গা মাত্র ৬%, যা দেশের মেট্রো শহরগুলির মধ্যে সবথেকে কম। এই অবস্থায় ধীর গতির ট্রাম রাস্তার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি দু’চাকার গাড়ি এবং পথচারীদের জন্য ট্রাম লাইনগুলি দুর্ঘটনার কারণও হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই কারণেই উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ট্রাম। এর সঙ্গে পরিবেশবান্ধব এবং দ্রুতগতির গণপরিবহণের সংখ্যা বৃদ্ধির পথেই হাঁটছে রাজ্য সরকার। যেমন ইলেকট্রিক বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি, মেট্রো রুট সম্প্রসারণ, যা মূলত যানজট রুখতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি একটি সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী স্পষ্ট জানান, ‘কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা চলছে। শেষ শুনানিতে ট্রাম নিয়ে রাজ্য সরকারের কী ভাবনা, তা জানতে চেয়েছে আদালত। সেই মতো রাজ্য সরকারের ভাবনা, মাত্র একটি রুটে অর্থাৎ এসপ্ল্যানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত ট্রাম চালানো যেতে পারে। বাকি রুটগুলিতে আর ট্রাম চালানো সম্ভব নয়। ট্রামের প্রতি সকলের আবেগ থাকলেও রাস্তাকে যানজট মুক্ত করতেই শহরের বুকে আর ট্রাম চালানো যাবে না।’ কিন্তু সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্ট থেকে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটাই হয়তো ট্রাম নিয়ে রাজ্য সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকারের ভাবনা যথাসময়ে আদালতের কাছে তুলে ধরা হবে। তাই, এখনই এই ভাবনাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসাবে ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই৷’ এই জল্পনার মাঝে শহরের নবনির্মিত অঞ্চলে ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসতেই হাসি ফুটেছে শহরবাসীর ঠোঁটে।