জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে প্রবাসী বাঙালি ও তিন জার্মান নাগরিক

এবার ধর্মতলায় অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে এসে দাঁড়ালেন তিন জার্মানি নাগরিক এবং একজন প্রবাসী বাঙালি। তাঁরা কলকাতার দুর্গাপূজা দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু সেই পূজার মধ্যেই আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁদের আন্দোলনের খবর সারাদেশ তথা গোটা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। আর সেই শহর কলকাতাতে দুর্গাপূজার উৎসবে এসে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে এসে না দাঁড়ানো তাঁদের কাছে অনুচিত মনে হয়েছে। সেজন্য তাঁরা ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন মঞ্চে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করে গেলেন।

জানা গিয়েছে, প্রবাসী বাঙালি রিকু ব্যানার্জির জন্ম কলকাতাতেই। এই শহরেই তিনি পড়াশুনা করেছেন, বড় হয়েছেন। এখন তিনি কর্মসূত্রে জার্মানিতে বসবাস করেন। এবছর পুজো উপলক্ষে তিনি তাঁর জার্মানি বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় উৎসব দেখতে এসেছিলেন। সেই দুর্গাপূজা উৎসবে সামিল হন। পরিদর্শন করেন পুজো কার্নিভালও। কিন্তু, শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া এক নৃশংস ঘটনার কথা তাঁদের অজানা ছিল না। এই ঘটনা তাঁদের মনকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। কলকাতার উৎসবে অংশ নিলেও অনশন মঞ্চে গিয়ে অনশনরত ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করাটা তাঁদের কর্তব্য বলে মনে হয়েছে।

এবিষয়ে রবিবার প্রবাসী বাঙালি রিকু ব্যানার্জি অনশন মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন,’আমি কলকাতাতে জন্মেছি, বড় হয়েছি, পড়াশুনো করেছি। এবার আমি এবং আমার বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিই কলকাতায় আসব দুর্গাপুজো দেখতে। এখানে এসে আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, আমাদের অনশন মঞ্চে আসা দরকার। কারণ পুজোর চেয়ে এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই কারণে আমরা আজকে এখানে এসেছি।’ রিকুর জার্মানি বন্ধু টিনা বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা হতবাক। আমি একজন মহিলা হিসেবে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি। আমি চাই না ফের এই ধরণের ঘটনা ঘটুক।’


প্রসঙ্গত পুজোর আগেই ধর্মতলায় অনশনে নেমেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার এই আমরণ অনশনের ১৭তম দিন। আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যার জেরে ন্যায় বিচার ও ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি নিয়ে শুরু হয়েছে এই আন্দোলন। অনশনের শুরু থেকে রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন মহল থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে প্রতীকী অনশনে সামিল হয়েছেন ডাক্তারদের বিভিন্ন সংগঠন। এমনকি সেলিব্রিটি বা বুদ্ধিজীবীরাও প্রতীকী অনশনে অংশগ্রহণ করেছেন। এই অনশনের মধ্যেই কেটে গিয়েছে দুর্গা উৎসব। সেই সময়ে জুনিয়র ডাক্তাররা একটি প্রতীকী মূর্তি নিয়ে শহরের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ‘অভয়া পরিক্রমা’ করেছেন। তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন ডাক্তারদের সম্মিলিত ফোরাম। পুজোর কার্নিভালের সময়েও পাল্টা প্রতিবাদ জানিয়ে ‘দ্রোহ কার্নিভাল’ করেন ডাক্তারদের সম্মিলিত সংগঠন। শহরে দফায় দফায় একাধিক মিছিলও বের করা হয়। সোদপুর থেকে একটি ন্যায় বিচার যাত্রাও সংগঠিত হয়। কিন্তু কোনও বিদেশী বা প্রবাসী বাঙালি আন্দোলনকারীদের পাশে এসে দাঁড়ানোর ঘটনা এটাই প্রথম।