কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় অপহরণকারীদের হাত থেকে রক্ষা পেল এক যুবক। রাস্তায় গাড়ি চালানোকে কেন্দ্র করে বচসা, আর তার জেরেই এক যুবককে অপহরণ করার অভিযোগ উঠল। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়া ঢালাই ব্রিজের কাছে। এই ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে দুজন। সোমবার সন্ধ্যে ৭টা ৪০। গড়িয়া ঢালাই ব্রিজের কাছে ডিউটিতে ছিলেন কনস্টেবল শামিম হোসেন মোল্লা। এমন সময় তিনি খবর পান, কিছু ব্যক্তি একজনকে অপহরণ করে ভ্যান গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। খবরের গুরুত্ব বুঝতে পেরে শামিমবাবু তখন তাঁদের সেক্টর অফিসার সার্জেন্ট সমীর সাঁতরাকে খবর দেন।
খবর যায়,গড়িয়া ট্রাফিক গার্ডের ওসি শেখ নাজমুল হোসেনের কাছেও। তৎপরতার সঙ্গে নাজমুলবাবু নির্দেশ দেন সেই গাড়িটিকে থামানোর জন্য। কোন গাড়িতে ওই যুবককে অপহরণ করা হয়েছে, সেটা চিহ্নিত করার জন্য নিকটবর্তী সিগনালকে অর্থাৎ পাটুলি ক্রসিংয়ের সিগন্যাল ‘লাল’ করে দেওয়া হয়। যার ফলে ওই রাস্তার সমস্ত গাড়ি সিগন্যালে থেমে যায়। শামিমবাবু গাড়িগুলির সামনে আসতেই, একটি ভ্যান গাড়ির মধ্যে থেকে যুবকের চিৎকার শুনতে পান। এরপর সেই গাড়িটি থেকেই উদ্ধার হয় এক যুবক। ওই যুবকের নাম রাজা নস্কর (২৪)। তাঁর বাড়ি পাটুলি ব্রিজি অঞ্চলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তখন রাজা নস্কর এবং তাঁর বান্ধবী বাইকে করে গড়িয়া ঢালাই ব্রিজ দিয়ে যাচ্ছিল। কিছুটা যাওয়ার পর তাঁরা দেখে, একটি ১৪ সিটের ভ্যান গাড়ির জন্য সমস্ত রাস্তায় যানজট তৈরি হয়েছে। রাজা তখন বাইক থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে ওই ভ্যানের চালককে অনুরোধ করেন, যাতে তিনি গাড়িটি ঠিকভাবে চালান। যাতে তাঁর গাড়ির জন্য রাস্তায় যানজট না হয়। রাজার কথা শুনে রেগে যান ওই ভ্যান গাড়ির চালক এবং তাঁর দুজন সহযাত্রী। অভিযোগ, তাঁরা হঠাৎই রীতিমতো চ্যাংদোলা করে রাজাকে তাঁদের ভ্যান গাড়িতে তোলেন। এবং গাড়ির মধ্যে রাজাকে প্রচুর মারধর করা হয়। শুধু তাই নয়, তাঁরা রাজাকে অপহরণ করেও নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। রাজার বান্ধবীকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, ওই ভ্যানের চালক থেকে শুরু করে, তাঁর সহযোগী সকলেই মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন।
কিন্তু কলকাতা পুলিশের গড়িয়া ট্রাফিক গার্ডের ওসি শেখ নাজমুল হোসেন এবং অন্যান্য ট্রাফিক কর্মীদের তৎপরতায় অপহরণকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায় রাজা। ট্রাফিক পুলিশ যখন এই অপহরণকারীদের পাটুলি থানার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন অপহরণকারীদের হাতের কাছে পেয়ে সাধারণ মানুষও তাঁদেরকে মারধর করতে শুরু করে। অবশেষে গড়িয়া ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ অভিযুক্তদের পাটুলি থানায় নিয়ে গিয়ে অফিসারদের হাতে হস্তান্তর করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে। ধৃত ব্যক্তিরা হল বিভাস সরদার এবং ঋষি সিং। বিভাসের বাড়ি মগরাহাট এবং ঋষির বাড়ি নরেন্দ্রপুর। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভ্যান গাড়ির চালক বিশ্বজিৎ দত্ত ঘটনার পর পলাতক। তাঁর সন্ধানে খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। ঘটনার মূল অভিযোগকারী রাজা নস্কর অকপটে জানালেন, ‘আমি কলকাতা পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ। যদি কলকাতা পুলিশ ঠিক সময়ে এসে আমাকে উদ্ধার না করতো, তাহলে হয়তো আমি আর মা-বাবার মুখ দেখতে পারতাম না। আমাকে এইভাবে সাহায্য করার জন্য আমি কলকাতা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি’।