এক লাফে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের খরচ বাড়ল রাজ্যের

আরজি কর কাণ্ডের পর থেকেই কর্মবিরতি এবং আন্দোলনে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁরা কর্মবিরতিতে থাকার ফলে, সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে মুমূর্ষু রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল ছুটে বেড়াতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের। এমনকী, আন্দোলন চলাকালীন বেশ কয়েকজন রোগী মৃত্যুরও খবর প্রকাশ্যে এসেছে।
অবশ্য চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন যে, জুনিয়ররা আন্দোলনে থাকলেও সিনিয়র চিকিৎসকরা নিরলস ভাবে চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

কিন্তু সেই সিনিয়র চিকিৎসকদের তৎপরতা সত্বেও রোগীদের অত্যাধিক চাপ ছাড়াও স্বল্প পরিমাণে সিনিয়র চিকিৎসক থাকার ফলে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঘাটতি থেকে গেছে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। আর তার মধ্যেই সরকারি হাসপাতাল থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন রোগী এবং তাঁদের পরিজনরা। বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকছেন তাঁরা। এবার স্বাস্থ্যের সমীক্ষায় উঠে এলো এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সম্প্রতি জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন ও কর্ম বিরতির জেরে স্বাস্থ্যসাথীর খরচ কত হয়েছে তা নিয়ে সমীক্ষা চালায় রাজ্য। তারপরেই রাজ্যের হাতে এই উদ্বেগজনক তত্ত্ব উঠে এসেছে। নবান্নের তরফে এই সমীক্ষার রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। সমীক্ষায় রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো পরিসংখ্যান উঠে এসেছে।

সেখানে দেখা গিয়েছে, ১০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে রাজ্যের প্রায় ৩১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিসংখ্যান অন্যান্য সময়ের তুলনায় দিন পিছু গড়ে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা করে বেশি। সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে, ১০ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাস্থ্যসাথী খাতে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা খরচ করেছে রাজ্য।


সেক্ষেত্রে, চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, রোগীরা সরকারি হাসপাতালে না-গিয়ে, বেসরকারি হাসপাতালে রোগীকে ভর্তি করানোর পর স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করছেন। সে ক্ষেত্রে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করার ফলে, এই বিপুল পরিমাণে আর্থিক বোঝা টানতে হচ্ছে রাজ্যকে।

প্রসঙ্গত, আরজি করের শিক্ষার্থী তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে আন্দোলন এবং কর্মবিরতিতে নেমেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। বেশ কয়েকবার টানাপোড়েনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকও হয়েছে জুনিয়র চিকিৎসকদের। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবিদাওয়াও পেশ করেছেন তাঁরা।

এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দাবিদাওয়া মেটানোর আশ্বাসও দিয়েছেন। সেইমতো রাজ্যের তরফে স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। অবশ্য প্রথমে কর্মবিরতি তুলে নিলেও পরবর্তী ক্ষেত্রে আবার আমরণ অনশনে বসেন একাংশ জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের অভিযোগ, এখনও তাঁদের সম্পূর্ণ দাবিগুলো কার্যকর হয়নি। তারপরেই পুজোর মধ্যে আমরণ অনশনে বসেন একাংশ জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাঁদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে এখন চিকিৎসাধীন।