সম্প্রতি পুজোর আগে বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল গোটা কয়েক সন্দেহজনক কফি মেশিন। কাস্টমস আধিকারিকরা মেশিন খুলে পরীক্ষা করতেই বেরিয়ে আসে কয়েকশো সিম কার্ড। তদন্তে নেমে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে, স্বল্প মূল্যে ওই সমস্ত সিম পাচার করা হচ্ছিল বিদেশে। যা পরে ব্যবহার করা হতো সাইবার প্রতারণার কাজে। তদন্তে আরও জানা যায়, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত এক বিদেশিনীও। ঘটনার তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছিল লালবাজার। কিন্তু তাতে কী? পুলিশের হাজার প্রচেষ্টা সত্বেও রমরমিয়ে চলছে সাইবার প্রতারণা। আর তাতে খুব সহজেই পা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কখনও ভুয়ো কলসেন্টার খুলে, কখনও পার্সোনাল কিংবা বিজনেস লোন দেওয়ার নাম করে আবার কখনও ‘ডিজিটাল’ অ্যারেস্টের ভয় দেখিয়ে।
অন্যদিকে নিজের অজান্তেই কারোর নামে থাকছে একাধিক সিম কার্ড। যা পরে পাচার হচ্ছে একইভাবে বিদেশে। ঠিক মাস দুয়েক আগে যেমনটা ঘটেছিল হাওড়ার বাসিন্দা শেখ আলিমের সঙ্গে। নিউমার্কেটের ফুটপাথ লাগোয়া এক ক্যানোপিতে স্বল্প মূল্যের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছিল সিম কার্ড। সিম কেনার সময় বায়োমেট্রিক মেশিন খারাপের অজুহাতে বেশ কয়েকবার ওই ব্যক্তির আঙুলের চাপ নিয়েছিল ব্যবসায়ী। তারপরেই কেল্লাফতে। নিজের অজান্তেই একাধিক সিম উঠে গিয়েছিল হাওড়ার বাসিন্দা আলিমের। আর সেই সিম ব্যবহার করেই দেদার চলতো প্রতারণা চক্র। যদিও তার বিন্দুমাত্র কিছু জানতেন না তিনি।
তবে শুধু রাস্তার ধারে ক্যানোপি নয়, প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত শহরের শপিংমল এবং রেস্তোরাঁগুলির একটা বড় অংশ। ঘটনার তদন্তে নেমে লালবাজারের হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বর্তমানে বেড়েছে অনলাইন লেনদেনের পরিমাণ। যার ফলে এক ক্লিকেই এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যায় দ্রুত। তবে সাইবার বিভাগের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সেই সময় শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে চলে যায় ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে শপিংমল কিংবা নামী ব্র্যান্ডের দোকানে মোবাইল নম্বর নেওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। কিছুদিন পর থেকেই সেই মোবাইল নম্বরে ঢুকতে থাকে ওই নামী ব্র্যান্ডের একের পর এক অফার বার্তাসহ লিঙ্ক। আর সেই লিঙ্কে ক্লিক করতেই স্মার্টফোনে বাসা বাঁধে স্পাইওয়ার।
শুধু তাই নয়, তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন এই রকম শপিংমল, রেস্তোরাঁ কিংবা নামী ব্র্যান্ডের দোকান থেকে ‘লিড’ অর্থাৎ আপনার নাম, মোবাইল নম্বর, ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য অল্প দামে কিনে ফেলে প্রতারকরা। পাশাপাশি গোয়েন্দাকর্তারা আরও জানাচ্ছেন, এই লিড বিক্রির তালিকায় রয়েছে আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত স্মার্টফোন রিচার্জ অ্যাপ থেকে শুরু করে অনলাইন লেনদেনের কাজে ব্যবহৃত অ্যাপও।
লালবাজার সূত্রে খবর, এই সমস্ত ‘লিড’ বিক্রি হয় মাত্র দশ হাজার থেকে কুড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে। তবে সাইবার জালিয়াতি রুখতে যে শুধুমাত্র পুলিশের কড়া পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়, তা স্পষ্ট ভাবেই জানাচ্ছেন পুলিশকর্তারা। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘আমরা প্রতারণা চক্র ধরতে ভীষণভাবে সক্রিয়। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বারংবার সতর্ক করার পরেও একই ফাঁদে বারবার পা দিচ্ছেন তারা। অনেক সময় প্রতারিত হওয়ার অনেক পরে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন সাধারণ মানুষ। সেটা যদি আগেই করা যায় তাহলে অনেকক্ষেত্রেই এই জালিয়াতি রুখে দেওয়ার সম্ভব’। একই সঙ্গে ডিজিটাল অ্যারেস্ট বলে কিছু হয় না, তাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন ওই পুলিশকর্তা।