চাকরি নেই। মিলবে না বেতন। তবুও পড়ুয়াদের টানে স্কুলে আসছেন চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা। সামনে পরীক্ষা। সে কথা ভেবেই ক্লাস নিচ্ছেন পড়ুয়াদের। ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষক শিক্ষিকাদের যে অনাবিল সম্পর্ক, তাকে কোনো নিয়মে বাঁধা যায় না। আরও একবার তা প্রমাণ করল হুগলির রিষড়া বিদ্যাপীঠ হিন্দি স্কুলের চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা। পড়ুয়াদের শিক্ষার আলো দেখানো যাদের কাজ, তাঁরাই চাকরি থেকে বহিষ্কৃত। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বদলে গিয়েছে জীবন। তা সত্ত্বেও কেবল ভালোবাসার টানে ও কচিকাঁচাদের পড়ানোর তাগিদে স্কুলে আসছেন তাঁরা।
২০১৬ সালের প্যানেল বাতিলের ফলে যে স্কুলে বেশি সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষিকারা চাকরিহারা হয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম রিষড়া উচ্চ বিদ্যাপীঠ ইউনিট ২ হিন্দি মাধ্যম স্কুল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বেসামাল অবস্থা স্কুলের। এই স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এখানে ১৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্যে ১২ জনই চাকরিহারা। অবশিষ্ট ৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকাকে নিয়ে স্কুল চলবে কী করে!
শুধু মাত্র ভালোবাসার টানে ও দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে স্কুলে আসেন সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ক্লাসও নেন পড়ুয়াদের। সল্টলেক থেকে রিষড়ার এই স্কুলে শিক্ষকতা করতে আসেন ইতিহাসের শিক্ষক। জানালেন, ‘চাকরি চলে গিয়েছে। বেতনও পাব না। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা রয়েছে সামনে। মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। চাকরি নেই, সেকারণে বিধ্বস্ত তো বটেই। তবে ছাত্রছাত্রীদের থেকে যে ভালোবাসা পাওয়া যায়, তা অমূল্য’।
অন্য আরেক শিক্ষক জানান, ‘পড়ানোই নেশা, পড়ানোই পেশা। সব কিছু তো টাকা দিয়ে হয় না। স্কুলের পড়ুয়াদের ভালোবাসার কাছে অনেক কিছুই ফিকে লাগে। তাই নিজেরাই স্কুলে এসেছি’।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর রিষড়া বিদ্যাপীঠ হিন্দি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাথায় হাত পড়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ‘পড়ুয়ার সংখ্যা অনেক। এই কয়েকজন টিচারে কিভাবে কাজ হবে। অনেক দূর দূর থেকে পড়ুয়ারা পড়তে আসে এই স্কুলে। আপাতত সব পড়ুয়াদের একসঙ্গে করে পড়ানো হচ্ছে।’
এভাবে কতদিন চলবে? চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারাই বা কতদিন ক্লাস নেবেন? হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়ে কিভাবে চলবে একটা স্কুল। চিন্তায় অভিভাবকরাও।