সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়
মাসখানেক আগের ঘটনা। শ্যামপুকুরের বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের প্রতিভা মুখার্জী রাত আটটা নাগাদ ক্যাব বুক করেছিলেন হাওড়া স্টেশন যাওয়ার জন্য। কিন্তু ক্যাব মহাত্মাগান্ধী রোড পৌঁছতেই বেঁকে বসেন চালক। ওই সময় হাওড়া স্টেশন যেতে অস্বীকার করেন তিনি। কিন্তু কেন? প্রশ্ন করতেই চালকের যুক্তি, ‘এই সময় বড়বাজারে তীব্র যানজট হয়। আপনার একার জন্য আমি ওই যানজট পেরিয়ে যেতে পারব না’। তবে ট্রেন ধরার তাড়া থাকায় আর কথা বাড়াননি প্রতিভাহদেবী। টাকা মিটিয়ে ভারী ব্যাগ কাঁধে বাসে চেপেই রওনা দিয়েছিলেন গন্তব্যের উদ্দেশে।
তবে এই অভিযােগ নতুন নয়। শহরের বুকে ক্যাব চালকদের বিরুদ্ধে হামেশাই ওঠে এমন অভিযোগ। পাশাপাশি ক্যাবে যাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ, রুট বদল, নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে বেয়াদপির অভিযােগও কম নয়। তাই এবার ক্যাব চালকদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে নতুন পন্থার সাহায্য নিতে চলেছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর। পরিবহন দপ্তর সূত্রে খবর, এবার থেকে রাতের শহরে ক্যাবে যাত্রীদের বিশেষ করে মহিলাদের কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা, তার খোঁজ নেবেন পরিবহন দপ্তরের কর্মীরা। একই সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছতে কোনও অসুবিধে হয়েছে কিনা, ক্যাব চালকের আচরণ কেমন ছিল, ন্যায্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে কিনা, এই সব ব্যাপারেও যাবতীয় খোঁজ নেবেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, শহরে যে সমস্ত ক্যাব বা যাত্রীবাহী গাড়ি চলে তাতে ইতিমধ্যেই ‘ভেহিকল লোকেশন ট্র্যাকিং ডিভাইস’ লাগিয়েছে পরিবহন দপ্তর। সে ক্ষেত্রে যাত্রীরা কোনও সমস্যায় পড়ে যদি পরিবহন দপ্তরের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করেন, তাহলে অভিযুক্ত ক্যাব সেই মুহূর্তে কোথায় রয়েছে, তা সঙ্গে সঙ্গে দেখে নেওয়া সম্ভব হবে। সেই মতো লোকেশন জানিয়ে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট থানাকে। যাত্রী সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই এমন পদক্ষেপ, এমনটাই জানাচ্ছেন পরিবহন দপ্তরের এক কর্তা।
তিনি আরও জানাচ্ছেন, বর্তমানে কলকাতা এবং বিধাননগর মিলিয়ে মােট তিনটি অ্যাপ ক্যাব সংস্থা সার্ভিস দিয়ে থাকে। তবে চালকদের ব্যবহার নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল বিস্তর। সেই কারণে ক্যাব সংস্থাগুলিকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন প্রতিটি গাড়িতে পরিবহন দপ্তরের হেল্পলাইন নম্বর লাগিয়ে রাখেন। একই সঙ্গে পুলিশের হেল্পলাইন নম্বরও লাগিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে পরিবহন দপ্তর সূত্রে খবর, সন্ধ্যা সাতটা থেকে ভাের পাঁচটা পর্যন্ত যে সমস্ত মহিলা যাত্রী ক্যাবে উঠবেন, তাঁদের মোবাইল নম্বরের তালিকা জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ক্যাব চালকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলেও, সেই মোবাইল নম্বরের সাহায্য অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন পরিবহন দপ্তরের কর্মীরা।
উল্লেখ্য, পুজোর আগেই অ্যাপ ক্যাব চালকদের অতীত ঘেঁটে দেখা শুরু করেছিল লালবাজার। আর এবার রাতের শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন পথে হাঁটছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর।