• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

‘অপরাজিতা’ বিলের টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাঠায়নি রাজ্য, সই না করার ইঙ্গিত রাজ্যপালের, সরব বিমান

'বাংলার অপরাজিতা বিল নতুন কিছু নয়। অন্ধ্র, অরুণাচল, মহারাষ্ট্রের নারী সুরক্ষা বিলের অনুকরণ মাত্র। এই বিলগুলি এখন রাষ্ট্রপতির কাছে পড়ে রয়েছে। সেটা জানা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে একইরকম বিল এনেছেন।'

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া ধর্ষণ বিরোধী ‘অপরাজিতা বিল’ নিয়ে তৈরি হল জটিলতা। এখনই এই বিলে ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর দাবি, রাজ্যের তরফে এই বিলের সঙ্গে কোনও টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাঠানো হয়নি। এই টেকনিক্যাল রিপোর্ট বিলে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য জরুরি। তা জানা সত্ত্বেও রাজ্য কোনও টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাঠায়নি। এ প্রসঙ্গে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যপাল নিজেও বিলটি দেখে সই করতে পারতেন। সংবিধানে সেই বিধান আছে। এ বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বৈঠক করেন। তারপর রাজ্যের তরফে রাজ্যপালের কাছে টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বিধানসভায় পাশ ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিল, ২০২৪)। সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলটি বিধানসভায় পাশ হয়। রীতি অনুযায়ী, বিধানসভায় পাশ হওয়া যে কোনও বিল রাজভবনে পাঠাতে হয়। সেই বিলে রাজ্যপাল স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হয়। রাজ্যপাল নিজে কোনও বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সেটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাশের পরেই সেটি রাজভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার রাজভবন থেকে টেকনিক্যাল রিপোর্টের বিষয়টি জানা যায়।

উল্লেখ্য, রাজ্যের যে কোনও বিল নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারেন রাজ্যপাল। কোনও বিল কেন আনা হয়েছে, কীভাবে আনা হয়েছে সেই সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি রিপোর্ট বিলের সঙ্গে জমা দিতে হয়। পাশাপাশি এই বিল কার্যকর করতে রাজ্যের কত টাকা খরচ হবে, তহবিল থেকেই বা কত খরচ হতে পারে তা-ও এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এই রিপোর্টকেই ‘টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ বলে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় আইন ব্যবস্থার সঙ্গে রাজ্যের আনা বিলের কতটা সাযুজ্য রয়েছে তা-ও এই রিপোর্টে জানাতে হয়। বিল সম্পর্কে এসব তথ্য রাজ্যপালের কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন তিনি। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিলের ক্ষেত্রে রাজ্য এরকম ভুল কী করে করল সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

এদিন রাজ্যপাল বলেন, ‘বাংলার অপরাজিতা বিল নতুন কিছু নয়। অন্ধ্র, অরুণাচল, মহারাষ্ট্রের নারী সুরক্ষা বিলের অনুকরণ মাত্র। এই বিলগুলি এখন রাষ্ট্রপতির কাছে পড়ে রয়েছে। সেটা জানা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে একইরকম বিল এনেছেন।’

পাশাপাশি এদিন রাজভবনের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘বিলের সঙ্গে টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাঠানো রাজ্য সরকারের কর্তব্য। রাজ্য সরকার তা পাঠায়নি। এর আগেও একাধিকবার টেকনিক্যাল রিপোর্ট না পাঠিয়েও বিল আটকে রাখার জন্য রাজভবনকে দুষেছে সরকার। রাজ্যপাল এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বিল পেশের আগে আরও হোমওয়ার্ক করা উচিত রাজ্যের।’

এবিষয়ে শুক্রবার বিধানসভার স্পিকার বলেন, ‘রাজভবন এখনও এ বিষয়ে বিধানসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আজকের মধ্যেই এই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। অবিলম্বে বিলটা পাশ করানো উচিত রাজ্যপালের। অন্য রাজ্যের সঙ্গে এখানকার বিষয় আলাদা। এখানে সাম্প্রতিক ঘটনায় রাজ্যবাসীর মনে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, তার জন্য দ্রুত এই বিল আইনে পরিণত করা উচিত। সংবিধানে সবই রয়েছে। প্রয়োজনে টেকনিক্যাল রিপোর্ট না পেলেও বিল যাচাই করে নিতে পারেন রাজ্যপাল।’ পরে জানা যায়, রাজ্যের তরফে রাজ্যপালের কাছে টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।