দুর্গাপুজো শেষ। এবার লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো এবং ভাইফোঁটা কাটিয়ে পড়ুয়াদের পুজোর ছুটি শেষ হবে। ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যের স্কুলগুলো খুলছে। আবার স্কুল খোলার পর ছট পুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে স্কুল ছুটি থাকবে। সেকারণে ১১ নভেম্বর থেকে স্কুলগুলোতে স্বাভাবিক পঠন-পাঠন শুরু হবে। কিন্তু স্কুল খুলতেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা এবং পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর তৃতীয় ইউনিট টেস্ট শুরু হচ্ছে। যেহেতু এবছর থেকে উচ্চমাধ্যমিক সেমিস্টার পদ্ধতিতে চালু হয়েছে এবং আগামী জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় সেমিস্টার শুরু হবে, তাই পুজোর ছুটির পরই ৬ নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সশরীরে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় সিমেস্টারের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হবে। সমস্ত স্কুলগুলিকে নিয়ে ধাপে ধাপে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। যদিও এখন (পুজোর ছুটির মধ্যে) দ্বিতীয় সিমেস্টারের পাঠ্যক্রমে কি ভাবে পড়াতে হবে, সেই বিষয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা ধারণা তৈরি করতে অনলাইনে ওরিয়েন্টেশন চলছে। সেজন্য সংসদের তরফ থেকে সংসদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। এই অনলাইন ওরিয়েন্টেশন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট এবং দুপুর আড়াইটে থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত চলবে। আগামী ২২ অক্টোবর পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলেই সূত্রের খবর। অবশ্য সশরীরে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ নভেম্বর মাস থেকেই শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রথম সিমেস্টারের সময় আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলাম। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই ভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে পরীক্ষা গ্রহণে স্কুলগুলিকে কোনও সমস্যার সম্মুখীন না-হতে হয়।’
সেক্ষেত্রে অনলাইন ওরিয়েন্টেশন এবং সশরীরে প্রশিক্ষণ যথেষ্ট কার্যকর বলে মনে করছে শিক্ষক মহলের একটি বড় অংশ। আবার কম সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করাটা, কঠিন বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘ দ্বিতীয় সেমিস্টারের জন্য অনলাইনে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। এর প্রয়োজন অবশ্যই রয়েছে।’
পাশাপাশি কম সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করার বিষয় তিনি বলেন, ‘ আমরা বারবার সংসদ সভাপতির কাছে দাবি জানিয়েছি যে, এত অল্প সময়ের মধ্যে বৃহৎ সিলেবাসের বোঝা যেভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে শ্রেণিকক্ষে এই সিলেবাস শেষ করা কোনওমতেই সম্ভব নয়। বিশেষ করে ইংরেজি, বাংলা, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে সিলেবাস যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তাতে পড়ুয়াদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। অল্প নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্ত বিষয়ের সিলেবাস শেষ করা অত্যন্ত কঠিন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও বেশি টিউশন নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে।’
অপরদিকে কিংকরবাবু সংসদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন যে, এ বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পুনর্বিবেচনা দরকার। কারণ, সিলেবাস ছোট এবং আরও মনোগ্রাহী করে তোলা প্রয়োজন। তা না-হলে, কোনওভাবেই এই অল্প সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর থেকে একাদশ ও দ্বাদশ মিলিয়ে মোট ৪টি সেমিস্টারের পরীক্ষা ভাগ করা হয়েছে। এই সেমিস্টারগুলোর মধ্যে প্রথম এবং তৃতীয় সেমিস্টার পুরোটাই (এমসিকিউ) অর্থাৎ মাল্টিপল চয়েস ভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়েছে। ওএমআর শিটে যার উত্তর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। ওদিকে দ্বিতীয় ও চতুর্থ সিমেস্টারে বড় প্রশ্ন থাকবে। পুজোর আগে সেপ্টেম্বর মাসেই একাদশের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আবার জানুয়ারিতে দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হবে। সেই পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন কি হবে? কী ভাবে পরীক্ষার্থীদের নম্বর বিভাজন করতে হবে? এই সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। সেক্ষেত্রে এই ওরিয়েন্টেশন এবং সশরীরে প্রশিক্ষণ, এই নয়া পদ্ধতির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন শিক্ষকরা।