গত আগস্টের আরজি কর কাণ্ডের দহনজ্বালা এখনও ভুলতে পারেনি মানুষ। তারই মধ্যেই কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের একাধিক প্রান্ত থেকে উঠে আসছে নারী নিগ্রহ থেকে শুরু করে যৌন হেনস্থার মতো ছবি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে, রাতের শহর কতটা নিরাপদ তা নিয়েও। তাই এবার অ্যাপ ক্যাব যাত্রীদের সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, সম্প্রতি কলকাতায় পরিষেবা দেয় এমন পাঁচটি অ্যাপ ক্যাব সংস্থা এবং দুটি অ্যাপ বাইক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারা। সূত্রের খবর, ওই বৈঠক থেকে ক্যাব সংস্থাগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাচাই করে দেখতে হবে চালকের অতীত। সেই সঙ্গে গাড়িতেও বেশকিছু ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে। যাতে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলি সম্মতি দিয়েছেন বলেই দাবি পুলিশের।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। সেই সঙ্গে রাতের শহরের নিরাপত্তাতেও অনেক খামতি রয়েছে বলে অভিযোগ তুলছেন অনেকেই। তাই নতুন করে যেন শহরে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেই কারণেই এই নিরাপত্তা বৈঠক বলেই জানাচ্ছে লালবাজার।
সূত্রের খবর, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি কমিশনার(ট্র্যাফিক) ওয়াই এস জগন্নাথ রাও। তিনি বলেন,‘যাত্রীদের সুরক্ষার স্বার্থেই ক্যাব সংস্থাগুলিকে বেশকিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে যাত্রীরা যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন, তেমনই চালকদেরও সুবিধে হবে।’
বৈঠকে ক্যাব সংস্থাগুলিকে জানানো হয়েছে, চালকের ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের প্রতিলিপি জমা করতে হবে। একই সঙ্গে চালক বর্তমানে কোথায় থাকেন, তাও জমা করতে হবে পুলিশের কাছে। জমা করতে হবে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, ছবি এবং মোবাইল নম্বর।
উল্লেখ্য, মাঝে মধ্যেই শহরের ক্যাব চালকদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন যাত্রীরা। বিশেষ করে ভাড়া নিয়ে মতানৈক্য এবং তা থেকে অনেক সময় হাতাহাতিরও অভিযোগ ওঠে। তাই ক্যাব চালকদের অতীতও জানতে চায় কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, সেজন্যে গত দশ বছরে সংশ্লিষ্ট চালকের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধের অভিযোগ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে অ্যাপ ক্যাব সংস্থাকে।
একই সঙ্গে, যাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে গাড়িতে কলকাতা পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর বড় বড় হরফে লিখে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া, নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে গাড়িতে কালো কাচ লাগানোর উপরেও। সেই সঙ্গে সরকারি বাসের মতো গাড়িতেও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলা হয়েছে।
বস্তুত, দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পরে গণপরিবহনে ব্যবহৃত সমস্ত গাড়িতে প্যানিক বাটন লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের নির্দেশমতো ইতিমধ্যেই প্যানিক বাটন বসেছে রাজ্যের সমস্ত বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি এবং অ্যাপ ক্যাবে। তবে ইচ্ছাকৃত বা কৌতূহলবশত সেই বাটন দাবানোর অভিযোগ যেমন ওঠে যাত্রীদের বিরুদ্ধে, ঠিক তেমনই অভিযোগ ওঠে ঠিক সময় প্যানিক বাটন কাজ না করারও। তাই প্যানিক বাটন ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে।
বর্তমানে, কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায় ক্রমশ বেড়েছে অ্যাপ ক্যাবের জনপ্রিয়তা। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন প্রায় দু’লক্ষ মানুষ ক্যাব বুক করেন। ক্যাব সংস্থার আওতায় চলে ২৫ হাজার গাড়ি। এই পরিস্থিতিতে অ্যাপ ক্যাবে যাত্রীরা যাতে নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্যই এই নির্দেশ বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের এক কর্তা। পুলিশের এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে অনলাইন অ্যাপ ক্যাব অপারেটার্সের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সব যাত্রীই চান নিরাপদে যাতায়াত করতে। সেকারণেই যাত্রী সুরক্ষার স্বার্থে পুলিশকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করতে আমরা তৈরি।’ একই সঙ্গে ওই কর্তার আরও দাবি, সব চালক যে খারাপ এমন তো নয়। অনেক যাত্রীই মদ্যপ অবস্থায় গাড়িতে ওঠে চালকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ভাড়া না মিটিয়ে চলে যান। সিসিটিভি বসানো হলে এই সব সমস্যা এড়ানো যাবে।