• facebook
  • twitter
Monday, 17 March, 2025

স্পিকারে বাজল ‘পেমেন্ট সাকসেসফুল’, অথচ ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকল না

সাইবার জালিয়াতির নতুন ফাঁদ

প্রতীকী চিত্র

স্পিকারে বাজল ‘পেমেন্ট সাকসেসফুল’, অথচ আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকল না। এভাবে নকল পেমেন্ট অ্যালার্টের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীর লক্ষ লক্ষ টাকা। কারণ আপনি ব্যস্ত সময়ে পেমেন্ট নেওয়ার সময় শুধু ওই মেসেজটুকুই শুনছেন, আপনার ইউপিআই অ্যাপটি খতিয়ে দেখার সময় হচ্ছে না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে একদল সাইবার অপরাধী। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা ছাড়াও সারা রাজ্যে এই ধরনের বেশ কিছু ঘটনার অভিযোগ সামনে এসেছে। প্রতারণা চক্রের জাল ছড়িয়েছে নদিয়া জেলাতেও।

কিন্তু অপরাধীরা কী ভাবে এই প্রতারণা চক্র চালিয়ে যাচ্ছে? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুল প্রচলিত একটি মোবাইল অ্যাপ ‘ইউপিআই পেমেন্ট চ্যানেল’ -এর মাধ্যমে গোপনে এই অপরাধকার্য চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা। এই অ্যাপ্লিকেশনটি দেখতে অনেকটা ফোন পে, গুগল পে কিংবা পেটিএমের মতো। ফলে সহজেই মানুষ ভুল করে বসছেন। টাকার বিনিময়ে এই চ্যানেলের গ্রাহক হচ্ছেন প্রতারকরা। এরপর ক্রেতা সেজে বিভিন্ন বিপণন কেন্দ্রে গিয়ে মালপত্র কিনে ভুয়ো পেমেন্ট করে চলে আসছেন। ব্যবসায়ীর দোকানে লাগানো কিউ আর কোড এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে স্ক্যান করতেই দোকানির স্পিকারে বেজে উঠছে নির্দিষ্ট অঙ্কের পেমেন্ট সাকসেসফুল। কিন্তু দিনের শেষে ব্যবসায়ীরা তাঁর পেমেন্ট অ্যাপ-এ হিসেব মেলাতে পারছেন না।

অর্থাৎ মালপত্র বিক্রির সময় বেশ কিছু পেমেন্ট সাকসেসফুল দেখালেও তাঁর ইউপিআই অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট কিছু পেমেন্ট ঢুকছে না। কিন্তু ততক্ষণে ক্রেতা ভুয়ো পেমেন্ট করে মালপত্র নিয়ে হাওয়া। তাঁর টিকি খুঁজেও পাওয়া দুষ্কর! এভাবে ব্যবসায়ীরা ভুয়ো ডিজিটাল পেমেন্টের ফাঁদে প্রতারিত হচ্ছেন। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে ‘সলমন’ নামে এক প্রতারকের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। অভিযুক্ত মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা হলেও তাঁর আসল নাম নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান মুর্শিদাবাদে এই প্রতারণা চক্রের সলমনই মূল পাণ্ডা। বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

তবে এই চক্র পশ্চিমবঙ্গে সবে জল বিছিয়েছে। এখন থেকেই ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে খুবই সচেতনতা জরুরি। সেজন্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক কর্তারা মোবাইলে অচেনা বা অপরিচিত লিঙ্ক বা চ্যানেলে ক্লিক করতে বারণ করছেন। অসুবিধায় পড়লে প্রয়োজনে সরকারি হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০-এ তাঁরা অভিযোগ জানাতে বলছেন। বহরমপুর জেলার পুলিশ সুপার বলেন, এবিষয়ে সতর্ক রয়েছে সাইবার অপরাধদমন শাখা। অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গিয়েছে, সম্প্রতি সাইবার অপরাধীরা ইউপিআই অ্যাপের একটি ক্লোন সফ্‌টঅয়্যার তৈরি করেছে। সম্প্রতি দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান সহ দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যে বিপুল সংখ্যায় এই ধরনের অভিযোগ সামনে এসেছে। দিল্লি, হরিয়ানা ও রাজস্থানে প্রথম এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়ে। গোটা ঘটনার নেপথ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের সাইবার অপরাধীরা যুক্ত রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। ২০২৪-এর ডিসেম্বরে হরিয়ানায় এই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে ৭০ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জেরা করে উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরপর রাজস্থান ও দিল্লির ১২ জন প্রতারককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।