পুজোর আগেই নতুন নগরপাল পেল কলকাতা, রদবদল ঘটল স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও

দীর্ঘ টানাপোড়েন। একবার নয়, দুবার ভেস্তে গিয়েছিল জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনা। তবে অবশেষে সোমবার কাটে জোট। চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে চলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার আলোচনা পর্ব। সেই পাঁচ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, কলকাতার নগরপাল (সিপি) বিনীত গোয়েল এবং উপ-নগরপাল (উত্তর) অভিষেক গুপ্তকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি, দাবি ছিল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে রদবদলেরও। আর সেই দাবি মতোই অবশেষে চল্লিশ দিন পর থামলো ‘স্নায়ুযুদ্ধ’। মঙ্গলবার বিকেলে সরানো হল কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলকে। তাঁকে পাঠানো হল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) এডিজি পদে।

আর নতুন নগরপাল করা হল ১৯৯৮ ব্যাচের আইপিএস অফিসার তথা রাজ্যের এডিজি আইন শৃঙ্খলা মনোজ কুমার ভার্মাকে। অন্যদিকে জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে সরানো হল উপ-নগরপাল (উত্তর) তথা ২০১১ ব্যাচের আইপিএস অফিসার অভিষেক গুপ্তকেও। তাঁকে পাঠানো হয়েছে ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল (ইএফআর)র কমান্ডিং অফিসার হিসেবে।  তাঁর জায়গায় বসানো হল শিলিগুড়ি কমিশনারেটের উপ-নগরপাল (পূর্ব)  দীপক সরকারকে।

উল্লেখ্য, শুধু কলকাতা পুলিশে নয়। রদবদল হয়েছে রাজ্য পুলিশেও। ১৯৯৫ ব্যাচের আইপিএস অফিসার জাভেদ শামীমকে রাজ্য আইবির এডিজি পদ থেকে সরিয়ে তাঁর কাঁধে দেওয়া  হল এডিজি আইন-শৃঙ্খলার মতো গুরুদায়িত্ব। অন্যদিকে, রাজ্য আইবির এডিজি পদে আসীন করা হল ১৯৯৩ ব্যাচের আইপিএস অফিসার জ্ঞানবন্ত সিংহকে। এতদিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্সের ডিরেক্টর পদে। একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তথা এসটিএফের এডিজি পদ থেকে ১৯৯৮ ব্যাচের আইপিএস অফিসার ত্রিপুরারি অর্থবকে সরিয়ে দেওয়া হল ডিরেক্টরেট অফ ইকোনমিক অফেন্সের ডিরেক্টর পদের দায়িত্ব।


জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে শুধু পুলিশ মহলে নয়, পদ পরিবর্তন করা হল স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও। প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস হালদার ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, যে তাঁরা আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার তদন্তকে প্রভাবিত করছেন এবং প্রকৃত তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছেন। জুনিয়র ডাক্তারদের মতে, তাঁরা ওই পদে থাকলে স্বচ্ছ তদন্ত সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষিতে, সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকের পর তাঁদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো মঙ্গলবার নবান্ন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, দেবাশিস হালদারকে অপসারণ করে স্বপন সোরেনকে নতুন স্বাস্থ্য অধিকর্তা করা হয়েছে।  উল্লেখ্য, তিনি আগে যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।

এছাড়া, কৌস্তভ নায়েককেও সরিয়ে ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ডিরেক্টর পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঠিক একই ভাবে ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ডিরেক্টর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল সুপর্ণা দত্তকে। তাঁকে অস্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা করা হয়েছে বলেই খবর নবান্ন সূত্রে।

প্রসঙ্গত, গত ৯ আগষ্ট রাতে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ করে খুন করা হয় তরুণী চিকিৎসককে। তারপর থেকেই নির্যাতিতার ন্যায় বিচার, নগরপাল বিনীত গোয়েলের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে কর্মবিরতির ডাক দেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। অন্যদিকে নগরপালের পদত্যাগের দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকরা লালবাজার অভিযান করে। প্রথমে ফিয়ার্স লেনের মুখে সেই মিছিল আটকে দিলেও চিকিৎসকদের জেদের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে পুলিশি ব্যারিকেড। নগরপাল বিনীত গোয়েলের হাতে প্রতীকী শিরদাঁড়া এবং তাঁর পদত্যাগের দাবিতে তুলে দেন পদত্যাগ পত্রও। কিন্তু তাতেও থামানো যায়নি আন্দোলনের ‘আগুন’কে। অবশেষে, সোমবার রাতের ঘোষণা মতো কলকাতার নগরপালের পদে বসলেন মনোজকুমার ভার্মা।

১৯৬৮ সালে রাজস্থানের সওয়াই মাধোপুরে জন্ম হওয়া এই আইপিএস অফিসার একদিকে যেমন সামলেছেন দার্জিলিংয়ের আইজি পদের দায়িত্ব, ঠিক একই ভাবে সদর্থক ভূমিকাতেই উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়িত্ব সামলাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সামলেছেন বাম আমলের জঙ্গলমহলকেও। ঠিক একই ভাবে কড়া হাতে সামলেছেন ‘কাউন্টার ইনসারজেন্সি ফোর্স’র দায়িত্বও। তবে, বর্তমানে আরজি কর কাণ্ডকে ঘিরে যেখানে ধাক্কা খেয়েছে কলকাতা পুলিশের ভাবমূর্তি। ঠিক সেই সময় তিনি কলকাতা পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে ঠিক কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি, সেই দিকেই নজর থাকবে রাজ্যবাসীর।