অতীত সাক্ষী আছে, দলে থেকে কুকথা বললে অথবা কুকর্ম করলে সেই ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতানেত্রীদের। ব্যতিক্রম হলো না বারাসতের তৃণমূল কাউন্সিলরের ক্ষেত্রেও। ত্রিপুরার এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বারাসত পুরসভার ২ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মিলন সর্দারকে এবার দল থেকে বহিষ্কার করলেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ তথা বারাসত সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। দলীয় নেতা-কর্মীদের কোনো গুরুতর অপরাধই বরদাস্ত করা হবে না, এই মর্মে বৃহস্পতির রাতে মিলন গ্রেপ্তার হওয়া মাত্রই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছেন বারাসতের চতুর্থবারের সাংসদ। কাকলির ভাষায়, ‘এই ধরণের সমাজ-বিরোধী, দল-বিরোধী কার্যকলাপ কোনও মতেই বরদাস্ত করবে না তৃণমূল। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে। দলের আদর্শ-নৈতিকতার উপরে কিচ্ছু নয়। রাজনৈতিক বর্ণ নির্বিশেষে, অপরাধ করলে তার শাস্তি পেতেই হবে’।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও গোটা বিষয়টি জানানো হবে, এমনটাও জানিয়েছেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতে ত্রিপুরার বাসিন্দা তথা বর্তমানে উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যবসায়ী দেবব্রত দে-কে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের জন্য দু’দফায় অপহরণ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলরকে। সিবিআই সূত্রের খবর, বারাসত থেকেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। খড়দহের একটি আবাসনের পার্কিং লট থেকে ব্যবসায়ী দেবব্রতকে অপহরণ করা হয়েছিল। খড়দহের ওই আবাসনে এক পরিচিতের বাড়িতে গিয়েছিলেন দেবব্রত। ঘটনার দিন কয়েকজন দুষ্কৃতী অস্ত্র দেখিয়ে সেখান থেকে তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপরে তাঁকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয় বারাসতের একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে। মিলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দেবব্রতকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন তিনি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিল খড়দহ থানার পুলিশ। পরে তা হস্তান্তরিত করা হয় সিআইডি-র হাতে।
তদন্তে নেমে অপহরণের একদিনের মাথায় সিআইডি-র স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের গোয়েন্দাদের একটি দল বারাসতের ওই আবাসনে হানা দিয়ে দেবব্রতকে উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় ছ’জনকে। তাঁরা সকলেই ওই অপহরণ-চক্রে যুক্ত বলে সিআইডির দাবি। বর্তমানে ধৃত সাতজনই পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এক জন প্রাক্তন পুলিশকর্মীও রয়েছেন। তদন্ত চলাকালীনই অপহরণের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে মিলন সর্দারের নাম উঠে আসে। বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। মিলন সর্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই তৎপর হয়েছেন কাকলি।
প্রসঙ্গত, অতীত ঘাটলে বোঝা যায়, তৃণমূলের অন্দরে অপরাধী থেকে প্রতারকদের কোনও স্থান নেই। সে জন্যই প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় হোক কিংবা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়া মাত্রই পদক্ষেপ করতে পিছপা দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কণ্ঠেও প্রায়শই অনুরণিত হয়, ‘কোনও অপরাধ-মূলক ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক বর্ণ না দেখে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিৎ’।
এক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের প্রদর্শিত পথেই হেঁটেছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সম্প্রতি আরজি কর আবহে ‘মা-বোন’দের হুমকি দেওয়ার অপরাধে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীশ সরকারকেও এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছেন কাকলি। এবার মিলনের কপালে জুটলো ‘বহিষ্কার’। সুতরাং, অন্যায়ের সঙ্গে যে দল কোনওভাবেই আপোষ করবে না তা বুঝিয়ে দিয়েছেন কাকলি। এর থেকেই স্পষ্ট, দলে থেকে অপরাধ করলে তার মূল্য দিতেই হয় নেতৃত্বকে।