আরজি কর কাণ্ডের মাঝেই শহরে এবার মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার

গোটা রাজ্য থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশে আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের প্রতিবাদের আগুন এখনও ঠাণ্ডা হয়নি। ইতিমধ্যেই আরজি কর কাণ্ডের জেরে শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সমাজের সর্ব স্তরের মানুষ এই ঘটনার নিন্দায় সরব। প্রতিবাদের মাঝেই ফের খাস কলকাতায় খুন হলেন এক মহিলা! তাঁর নাতি এখনও নিখোঁজ।

বৃহস্পতিবার সকালে আনন্দপুরে ওই মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। ঘটনায় এক ট্যাক্সি চালক-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দক্ষিণ শহরতলীতে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে আনন্দপুর থানার পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম রেহানা বেগম ওরফে বেবি (৫৫)। তিনি নারকেলডাঙা এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের অনুমান, মহিলাকে অন্য কোথাও খুন করে দেহ ওই ঝোপের ধারে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনায় ভিকি সাউ নামে এক গাড়িচালক-সহ মোট ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এদিন সকালে আনন্দপুর এলাকার নোনাডাঙার সবুজপল্লিতে রাস্তার পাশে এক ঝোপের ধারে মহিলার দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই মহিলার দেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতার দেহে সাদা চুড়িদার ছিল। পাশাপাশি মুখ ও মাথার পিছনে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। প্রাথমিকভাবে মহিলার পরিচয় জানা না-গেলেও, পরে তা জানা যায়।

আরও জানা গিয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর পাঁচ বছরের নাতিও ছিল। তবে মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হলেও, তাঁর নাতি এখনও নিখোঁজ। পাঁচ বছরের শিশুটি কোথায় গেল? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে, রেহানার পরিজনদের দাবি শিশুর খোঁজ যতক্ষণ না-মিলছে, ততক্ষণ রেহানার দেহ তাঁরা নেবেন না। রেহানার মেয়ে আরশি বেগমের দাবি, মা তো চলে গিয়েছেন, এবার অন্তত শিশুটিতে দিন।

ওদিকে বুধবার রাতে পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। থানা ঘেরাও করেন মৃতার আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীরা। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে মৃতা রেহানার খোঁজ না-মেলায়, তাঁরা পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ সেই অভিযোগে গুরুত্ব দেয়নি। যদিও প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কেউ বা কারা ওই মহিলাকে বাইরে কোথাও খুন করে সেখানে ফেলে দিয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে, ওই মহিলা শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।

উল্লেখ্য, নারকেলডাঙা এলাকায় দুই নাতি ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন রেহানা। কয়েক মাস আগে ভিকি তাঁর বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন। মঙ্গলবার ভিকির গাড়িতেই আনন্দপুর যাওয়ার জন্য রওনা হন রেহানা। তিনি ফিরে না-আসায়, পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। পরিবারের এক সদস্য জানান, শেষবার তিনি যখন ফোন ধরেন, তখন জানান তিনি গাড়িতে ফিরছেন। যদিও পরে তিনি আর ফেরেননি। পরে তাঁকে ফোন করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে এক তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। যা ঘিরে তোলপাড় গোটা রাজ্য ও দেশ। এমনকী, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। এদিকে সেই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নে মুখে ছিল। আর এর জেরে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ নিজেরাই রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সকাল-বিকেল মিছিল বার করছেন সাধারণ মানুষ। তাদের একটাই দাবি, ‘অভয়ার বিচার চাই।’

এমনকী, এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সেখানেও রাজ্য সরকার, পুলিশ প্রশাসন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আর সেই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতেই ফের শহরে এমন একটি ঘটনা ঘটল। শনিবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মরত নারীদের সুরক্ষায় একগুচ্ছ নির্দেশিকা প্রকাশ করেন। সেখানে রাজ্য সরকারের তরফে মহিলাদের যথাসম্ভব কম নাইট ডিউটি দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে, রাতে মহিলাদের কাজের সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে একটা টিম হিসেবে থাকেন তাঁরা। একা কোনও মহিলাকে নাইট ডিউটিতে দেওয়া যাবে না। শুধু তা-ই নয়, একে অপরে কোথায় যাচ্ছেন, সেটাও জানতে হবে।

সরকার এ-ও জানিয়েছে, একটি বিশেষ মোবাইল ফোন অ্যাপ তৈরি করা হবে। যাতে অ্যালার্ম ডিভাইস থাকবে। প্রত্যেক কর্মরত মহিলাকে সেটা ডাউনলোড করতে হবে। যা স্থানীয় থানা বা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। যদিও রাজ্য সরকারের এই নির্দেশ, রাতে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেওয়ার সামিল বলে তোপ দেগেছেন সাধারণ মানুষ থেকে বিরোধীরা। তবে এই সমস্ত প্রস্তাবের মাঝেই শহরে নারী নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠল।