আরজি কর আন্দোলনে নাটকীয় মোড়! সিনিয়র ডাক্তারদের গণইস্তফা

গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত অবস্থায় মর্মান্তিক মৃত্যু চিকিৎসকের; পৈশাচিক অত্যাচার, ধর্ষণ, খুন! তিলোত্তমার মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাকে। প্রতিবাদের ঢেউ গোটা দেশে। বিচার চাইছে বাংলা। বিচার চাইছে সাধারণ মানুষ। যে আরজি কর আন্দোলনের রেশ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই আন্দোলনেরই এবার নাটকীয় পট পরিবর্তন। ১০ দফা দাবিতে ধর্মতলায় অনশনরত ৭ জুনিয়র ডাক্তারের সমর্থনে এবার গণইস্তফার সিদ্ধান্ত আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকদের।

গত শনিবার থেকে ধর্মতলায় গড়ে উঠেছে জুনিয়র ডাক্তারদের অস্থায়ী মঞ্চ। দাবি মূলত ১০টি। রাজ্য সরকারের কাছে সেই দাবি পেশও করেছেন চিকিৎসকেরা। তবে সে দাবি যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরণ অনশেনর ডাক দিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। প্রথমে কর্মবিরতিতে অনড় থাকলেও পরে সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন তাঁরা। কিন্তু আন্দোলন থামবে না, এ কথা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। এবার সেই আন্দোলনকে আরও বড় করে তুলতে বড় সিদ্ধান্ত নিলেন সিনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিদাওয়া যাতে তাড়াতাড়ি পূরণ করে রাজ্য সরকার, সেই দাবিতেই গণইস্তফা দিলেন ৫০ জন সিনিয়র ডাক্তার। তাঁদের মধ্যে বিভাগীয় প্রধানরাও রয়েছেন বলে খবর।

মঙ্গলবারই গণইস্তফা দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকে চিঠি পাঠিয়েছেন আরজি করের সিনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলনকারীদের দাবিদাওয়া নিয়ে সরকার যাতে দ্রুত চিন্তাভাবনা করে উপযুক্ত পদক্ষেপ করে, চিঠিতে সেই আর্জিই জানিয়েছেন তাঁরা। দাবি পূরণ না হলে পরবর্তীকালে ব্যক্তিগত স্তরেও ইস্তফার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিনিয়ররা। পুজোর মাঝে সিনিয়র ডাক্তারেরা গণ ইস্তফার সিদ্ধান্তে আরজি করের চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা। চাপ বাড়বে সরকারের উপরও। জানা গিয়েছে, জুনিয়র চিকিৎসকদের সমর্থনে এসএসকেএম-এনআরএস সহ একাধিক সরকারি হাসপাতালেও সিনিয়র ডাক্তাররাও একই পথে হাঁটতে পারেন। সেক্ষেত্রে গোটা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়তে পারে।


আরজি করের সিনিয়র ডাক্তাররা গণইস্তফার কথা ঘোষণা করতেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকদেরও হুঁশিয়ারি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি পূরণ না হলে তাঁরাও গণইস্তফা দেবেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক সিনিয়র চিকিৎসকের কথায়, জুনিয়র ডাক্তাররা একদিকে বিচারের জন্য লড়ছেন অন্যদিকে হাসপাতালে পরিষেবাও দিচ্ছেন। তাই তাঁদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিবেচনা করারও অনুরোধ করেন তাঁরা।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আগামী ১০ তারিখের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ৯০ শতাংশ উন্নয়নমূলক কাজ শেষ হয়ে যাবে। এর পরই তিনি সবাইকে কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। তার ঠিক পরের দিনই এই ইস্তফার সিদ্ধান্ত। দ্রুত বিচারের দাবি, হাসপাতালগুলির উন্নয়ন, সর্বোপরি ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উপর চাপ বাড়াতেই সিনিয়র ডাক্তাররা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মত বিশেষজ্ঞমহলের।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে রাজ্যজুড়ে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেই কর্মসূচিতে সামিল হয়েছেন সিনিয়র ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরাও। মঙ্গলবার অনশন মঞ্চ থেকে আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দেন, আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে দুর্নীতি, থ্রেট কালচার সহ সব ধরনের বেনিয়ম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই আন্দোলন চলবে। জুনিয়র ডাক্তারদের এই ঘোষণার পরই আরজি কর হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তারদের এই সিদ্ধান্ত। শুরুটা আরজি করে থেকে হলেও একই পথে হাঁটার কথা ভাবছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ডাক্তাররাও।

এদিকে গণইস্তফার বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে নবান্ন। অচলাবস্থা কাটাতে নবান্নে জরুরি বৈঠকের ডাক মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের। বৈঠকে ডাক পড়ে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমেরও। আরজি কাণ্ড নিয়ে এর আগে একাধিকবার বৈঠকে বসেছে নবান্ন। তারপরেও জটিলতা কাটেনি। উল্টে চাপ বেড়েছে। এই আবহে আরজি করের সিনিয়র ডাক্তারদের গণইস্তফা সেই চাপ আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিল। পুজোর মুখে সেই অচলাবস্থা কাটাতেই ফের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নবান্নর।