• facebook
  • twitter
Thursday, 30 January, 2025

হাতুড়ি পিটিয়ে ৪৮তম কলকাতা বইমেলার উদ্বোধন করলেন মমতা

উদ্বোধনী মঞ্চে প্রকাশিত হল মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ৩টি বই

নিজস্ব চিত্র

অবশেষে মঙ্গলবার উদ্বোধন হল ৪৮তম কলকাতা বইমেলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আন্তর্জাতিক বইমেলার সূচনা করেন। ৪৮তম এই বইমেলার উদ্বোধনে ৪৮ বার হাতুড়ি ঠুকে মুখ্যমন্ত্রী বইমেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী মঞ্চে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা তিনটি বই। সেগুলি হল – ‘লিপিবদ্ধ কিছু কাজ’, ‘Salute 2’, এবং ‘বাংলার নির্বাচন ও আমরা’।

সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে বইমেলার সূচনার পর সকল বই প্রেমীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা বলেন, ‘বইমেলা হল আমাদের বইবৃক্ষ’। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই বইমেলা কেবল বইয়ের মেলাই নয় বরং বটবৃক্ষের মতো। যা ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ধারাবাহিকতাকে বয়ে নিয়ে চলেছে। এ বইমেলা প্রত্যেক বইপ্রেমীর গর্ব। তাঁর ভাষায়, ‘বইবৃক্ষ যুগ যুগ ধরে মহীরুহ।’ একই সঙ্গে নতুন লেখক, লেখিকাদেরও উৎসাহিত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তাঁর বক্তব্য, ‘অনেকে বলেন উনি ছোট লেখক, উনি বড় লেখক! কিন্তু ভুললে চলবে না, অনেক ছোট লেখক-লেখিকাদের হাত দিয়েও অনেক সুন্দর লেখা বেরোয়। বই মানে বই-ই। এখানে কোনও ভেদাভেদের জায়গাই নেই। প্রত্যেক লেখকের সৃষ্টিই স্বকীয়তায় সম্পূর্ণ।’ যেহেতু এবারের বইমেলার থিম কান্ট্রি জার্মানি, সেহেতু তিনি জার্মানের সঙ্গে বাংলা তথা ভারতের অতীত সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথায় উঠে আসে নেতাজি-প্রসঙ্গ। তিনি মনে করিয়ে দেন, জার্মানির সঙ্গে তাঁর এবং দেশ তথা বাংলার যোগসূত্র কতটা গভীর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা জার্মানির একাধিক প্রতিনিধির উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কলকাতা বইমেলা বিশ্বসেরা। আমি এটাকে আরও বড় পরিসরে দেখতে চাই। আর জার্মানির সঙ্গে তো ভারতের তথা বাংলার গভীর যোগসূত্র রয়েছে, কারণ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস। তাঁর মেয়ে ওখানেই থাকেন, তাঁর সঙ্গে আমার আলাপও হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী মনে করান, কীভাবে নেতাজি দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলেন।

বইমেলায় বিখ‍্যাত লেখক আবুল বাশারকে ‘লাইফ টাইম অ‍্যাচিভমেন্ট অ‍্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে গিল্ড। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে এই সম্মান তুলে দেন এদিন। এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটালের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও মানুষ বই পড়ছেন। বই আমাদের প্রেরণা, দিশা।’ তিনি তথ্য পেশ করে জানিয়েছেন, ডিজিটালের যুগেও গত বছর প্রায় ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বইমেলা থেকে। গতবার ২৭ লক্ষের বেশি মানুষ এসেছিলেন। এবারও রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হবে, আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর সংযোজন, ‘বই ঘর সাজানোর জিনিস নয়, হৃদয়ে সাজানোর জিনিস। ভাষা, সীমান্ত, সংস্কৃতির আলাদা হতে পারে। কিন্তু মানবিকতা আলাদা ব্যাপার। বই নিয়ে হাসুন, বই কিনুন, বই ভালবাসুন।’

তিনি চান, আরও বেশি করে মানুষ বই পড়ুক এবং কলকাতা বইমেলা আরও বড় হোক। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, কলকাতা বইমেলা দেশের সেরা, তেমনই বিশ্বের নিরিখেও এটিকে আরও বড় করার প্রয়সী তিনি।

আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকায় ফুটবল প্রসঙ্গও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে। উঠে শহরে নীল সাদা রং করার প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, তিনি যখন শহরের বিভিন্ন রাস্তার রং নীল-সাদা করছিলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, তিনি আর্জেন্টিনাকে অনুসরণ করছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব রং সবার জন্য। এতে কোনও ভেদাভেদ নেই। তবে সব রং সবার পছন্দ নাই হতে পারে, এই যা। এছাড়া আর কোনও ভেদ থাকতে পারে না।’

এদিন জার্মানি এবং আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিদের মুখ্যমন্ত্রী এও মনে করিয়ে দেন, বাংলা কতটা ফুটবল পাগল। এবার জাগো বাংলার থিম ‘মা মাটি মানুষ’। এই থিম নিজেই করেছেন মুখ‍্যমন্ত্রী। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘আমি অর্জুন গাছ লাগাতে বলেছিলাম। থিম আমার নিজের করা। কুলঙ্গীতে যেমন বই থাকে। আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করি।’

উল্লেখ্য, এবার ২৮ জানুয়ারি বইমেলার উদ্বোধন হলেও, চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। বইমেলায় ক্রেতাদের যাতায়াতের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেজন্য অতিরিক্ত বিশেষ বাস পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। যতদিন বইমেলা চলবে, ততদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিশেষ বাস পরিষেবার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য পরিবহন দপ্তর। শহরের প্রায় সমস্ত রুট থেকে অতিরিক্ত এই ‘বইমেলা স্পেশাল’ বোর্ড লেখা বাস পরিষেবা পাওয়া যাবে।

শুধু তাই নয়, বইমেলা উপলক্ষে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও অতিরিক্ত ১৬টি মেট্রো পরিষেবা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত আপ-ডাউন মিলিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডরের শিয়ালদা থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ (গ্রিন লাইন-১) ১২২টি মেট্রো চালানো হবে। এমনিতে ওই লাইনে ১০৬টি মেট্রো চালানো হয়। প্রতিদিন বিকেল ৪ টে ৪০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭ টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত ১২ মিনিটের ব্যবধানে মেট্রো চলে। কিন্তু বইমেলার সময় দুপুর ২ টো ৫ মিনিট থেকে রাত ৯ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ১২ মিনিটের ব্যবধানে মেট্রো পরিষেবা পাওয়া যাবে।