আজ মহাষষ্ঠী, রাতের শহর জনসমুদ্র!

আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর। প্রাণের পুজোয় মেতে উঠেছে আপামর বাঙালি। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন। কিন্তু পুজো শুরু হয়েছে মহালয়া থেকেই। গায়ে নতুন জামা, পায়ে নতুন জুতো পরে দেবী দর্শনে বেরিয়ে পড়েছেন আট থেকে আশি। মণ্ডপে মণ্ডপে উপচে পড়া ভিড়। সেরার সেরা দেবী প্রতিমা দর্শন এবং মণ্ডপ ও আলোকসজ্জা দেখতে রাজপথে জনসমুদ্র।

এ বছরের পুজোর শুরুটাই হয়েছে বৃষ্টি দিয়ে। মহালয়ার সকালেও আকাশ ঢেকেছিল কালো মেঘে। মেঘের গর্জন, সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি। কিছুটা হলেও মন খারাপ হয়েছিল বাঙালিদের। পুজোর পাঁচ দিনও কি বৃষ্টি হবে? মাটি হয়ে যাবে পুজোর মজা? দানা বেঁধেছিল আশঙ্কা। তবে বৃষ্টি হোক বা কাঠফাটা গরম, প্রকৃতি কখনই যে বাঙালিকে ঠাকুর দেখা থেকে বঞ্চিত করতে পারেনি, এ দৃষ্টান্ত নেহাত কম নয়। প্রতি বছরই সে কথা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। এ বছরও তার অন্যথা হল না। দেবীপক্ষের সূচনা থেকেই শুরু হয়ে গেল বাঙালিদের প্যান্ডেল হপিং।

মহালয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহর সহ জেলারও একাধিক পুজোর উদ্বোধন করেন। সেই থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির প্রাণের পুজো দুর্গাপুজো। শ্রীভূমি থেকে সুরুচি সংঘ, সর্বত্রই জনজোয়ার চোখে পড়ার মতো। কোথাও সাবেকি প্রতিমা, কোথাও আবার থিমের খেলা। ভিড় টানছে উত্তর থেকে দক্ষিণের একাধিক পুজো। চুটিয়ে চলেছে প্যান্ডেল হপিং, জমিয়ে পেটপুজো, আড্ডা আর ঘোরাফেরা।


উদ্বোধনের দিন থেকেই লেকটাউনের শ্রীভূমিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কারণ কলকাতার পুজোয় দর্শনার্থীদের তালিকার শীর্ষেই থাকে সুজিত বসুর পুজো। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত তিরুপতি বালাজি মন্দিরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে এবারের পুজো মণ্ডপ। অন্যদিকে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের বিশাল গোলক নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের। তৃতীয় থেকেই এই মণ্ডপ দেখার জন্য উপচে পড়ছে ভিড়। রাত বাড়ার পরেও মণ্ডপের বাইরে দর্শনার্থীদের ঢল। উত্তর কলকাতার কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক, বাগবাজার সর্বজনীন, শোভাবাজার রাজবাড়ির ভিড় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এছাড়াও দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে টালা প্রত্যয়, টালা বারোয়ারি, আহিরীটোলা সর্বজনীন, দমদম পার্ক তরুণ সংঘ, সিকদার বাগান সাধারণ দুর্গোৎসব, নলিন সরকার স্ট্রিটের পুজো।

উত্তর কলকাতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ কলকাতার একাধিক ক্লাব। কোনও প্যান্ডেলেই ভিড়ের অভাব নেই। বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, চেতলা অগ্রণী, দেশপ্রিয় পার্ক, হিন্দুস্তান পার্ক, একডালিয়া এভারগ্রিন, মুদিয়ালি, শিব মন্দির, বরিশা ক্লাব, নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো প্যান্ডেলের সামনে তৃতীয়া থেকেই লম্বা লাইন। সকালের দিকে ভিড় তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও সন্ধে হতেই প্যান্ডেলগুলি ভিড়ে ঠাসা।

ইতিমধ্যেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছুটি পড়ে গিয়েছে। কোথাও চতুর্থী হয়ে, কোথাও আবার পঞ্চমী হয়ে। তাই ঠাকুর দেখার জন্য আর অপেক্ষা নয়। প্রত্যেক প্যান্ডেলেই জনসমাগম। এদিকে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড়ের পাশাপাশি ভিড় বাড়ছে ট্রেন-মেট্রো-বাসেও। বাড়ছে যানজটও। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় বাড়ছে মানুষের সংখ্যা। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ কলকাতায় ঠাকুর দেখতে আসার কারণে ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেন। মেট্রোতেও তিল ধারণের জায়গা নেই। জনসমুদ্রে যেন ডুবে গিয়েছে গোটা শহর। তৃতীয়া-চতুর্থীতেই যদি এই ছবির সাক্ষী থাকে তিলোত্তমা তাহলে অষ্টমী-নবমীতে কী হতে চলেছে তা কিছুটা হলেও ধারণা করা যাচ্ছে। ভিড় সামলাতে ইতিমধ্যেই তৎপর হয়েছে প্রশাসন। রাস্তায় নেমেছে অতিরিক্ত পুলিশ। যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে কলকাতা পুলিশ।

বছরে পুজো এক বারই আসে। এই পাঁচটা দিনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে চান না কেউই। তাই বাস-ট্রেন-মেট্রোয় যতই ভিড় হোক না কেন, তা সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বাঙালির কাছে জল-ভাত। তাই পুজোর আনন্দ লুটেপুটে খেতে দ্বিতীয়া-তৃতীয়া থেকেই রাজপথে কার্যত জনজোয়ার। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে সেই চেনা ভিড়। কারণ এই কয়েকটা দিন সব চিন্তা-ভাবনা দূরে সরিয়ে রেখে শুধু পুজোর আনন্দেই মেতে উঠতে চায় আপামর বাঙালি।