কলকাতা শহরে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া রুখতে পুরসভা জোরকদমে কাজ শুরু করেছে। মাসের শুরুতেই নবান্নে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এক বৈঠক হয়। যেখানে শহরের পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে দফায় দফায় নির্দেশ দেওয়া হয় আধিকারিকদের। প্রতিটি পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে সেইসব এলাকায়, যেখানে আগের বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি ছিল। তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ৬৮টি ওয়ার্ডকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সোমবার অতীন ঘোষ জানান, কলকাতা পুরসভা আনুষ্ঠানিকভাবে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া রোধে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে, আর সেই তালিকায় ভারতও পিছিয়ে নেই। কলকাতায় ১৪৪টি ওয়ার্ডে মর্নিং ডাটা কালেকশন পদ্ধতি চালু হয়েছে, যেখানে কর্মীরা সকালেই তথ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে আপলোড করেন।
তিনি আরও বলেন, আগে যেখানে ১৩,৯২৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরের বছর সেই সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। তবে কলকাতার পরিবেশের কারণে ডেঙ্গির সংখ্যা আবারও বেড়ে যেতে পারে। তাই বাড়তি সতর্কতা নেওয়া দরকার। পুরসভা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি ট্যাক্স দফতরকেও যুক্ত করা হয়েছে, যাতে আক্রান্তদের বাড়ির ঠিকানা চিহ্নিত করা যায়।
২৬ মার্চ থেকে হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ মিটিং শুরু হবে, যেখানে পরিত্যক্ত কারখানাগুলোর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্য যেখানে যেখানে সমস্যা রয়েছে, সেখান থেকে ইতিমধ্যেই ৩৯ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছে পুরসভা।
পুরসভা সূত্রে খবর, ডেঙ্গি প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে পোস্টার লাগানো হয়েছে। ৪৯৬ ও ৪৯৯ ধারার অধীনে নোটিস টাঙানো হয়েছে। অপরিষ্কার এলাকা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুরসভা ইতিমধ্যেই ৩২টি মোবাইল টিম ও ১৪৪টি ভেক্টর কন্ট্রোল টিম মোতায়েন করেছে।
জানা গিয়েছে, যেসব বাড়ি দীর্ঘদিন তালাবন্ধ রয়েছে, সেগুলো পুরসভার উদ্যোগে পরিষ্কার করা হবে। ৪৫৫ ও ৪৫৬ ধারার অধীনে বাড়ির তালা ভেঙে কাজ চালানোর ক্ষমতা রয়েছে পুরসভার। তবে, এই কাজে পুলিশের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪৫টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি এই বছরই হয়েছে।
পুরসভা জানিয়েছে, আগামী জুনের মধ্যে শহরের সমস্ত অপরিষ্কার এলাকা পরিষ্কার করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, প্রতি শনিবার ও বুধবার মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত ওয়ার্ডের তালিকা: ২, ৪, ৭, ১৪, ২৬, ৩১, ৩৩, ৩৬, ৪৮, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬১, ৬২, ৬৫, ৬৯, ৭৭, ৭৯, ৮১, ৮২, ৮৫, ৮৬, ৮৮, ১০৩, ১০৫, ১১০, ১১২, ১১৫, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৪, ১২৬, ১২৭, ১২৯, ১৩১, ১৪৪।