শুক্রবার এএসকেএম হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে গণ কনভেনশনের আয়োজন করল জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তারস ফ্রন্ট’। এই কনভেনশন থেকেই আন্দোলনের নতুন দুটি কর্মসূচির ঘোষণা করা হল। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর ও ২ অক্টোবর এই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরজি করের নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তি হাসপাতালে রাখা হবে বলে এদিন প্রস্তাব দেওয়া হয়। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা উৎসবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন। শুক্রবারের এই গণ কনভেনশনে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
এদিন জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তার, মোহনবাগান–ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক, পরিচালক, বিশিষ্ট অভিনেতা সহ রিকশা চালকদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সমাজের সকল স্তরের মানুষের থেকে পরামর্শ নিয়ে আন্দোলনের রূপরেখা ঠিক করতে চাইছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এদিন সঞ্চালক মীর, পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সমাজকর্মী মীরাতুন নাহার সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিচারের দাবিতে গণ কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন।
২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার এবং ২ অক্টোবর মহালয়ার দিন নিজেদের পরবর্তী কর্মসূচির কথা ঘোষণা করল জুনিয়র ডাক্তাররা। ২৯ সেপ্টেম্বরের কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘পাড়ায় থাকছি একসাথে, উৎসবে নয় প্রতিবাদে।’ আরজি করের নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে সেদিন রাজপথ থেকে অলিগলি ভরানোর ডাক দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২ অক্টোবর মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। এরপর ধর্মতলায় হবে মহাসমাবেশ। আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার হচ্ছে বলে এদিন অভিযোগ করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সম্প্রতি প্রচার করা হচ্ছিল, পাঁচ দফা দাবির পরেও জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে নতুন নতুন দাবি করা হচ্ছে। এদিন আন্দোলনকারীরা জানান, এই প্রচার সম্পূর্ণ ভুঁয়ো। তাঁরা নতুন কোনও দাবি করেননি। অপপ্রচার করে তাঁদের কণ্ঠরোধ করা যাবে না বলেও বার্তা দেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন গণকনভেনশনে বক্তব্য রাখেন এসএসকেএমের ডিরেক্টর মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতা, চিকিৎসক অর্ণব সেনগুপ্ত সহ আরও অনেকে। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এদিন বলেন, ‘এই আন্দোলন স্বাভাবিক নয়। ডাক্তারদের যখন রাস্তায় বসতে হচ্ছে, বিচার চাইতে হচ্ছে, বুঝতে হবে, সব ঠিক নেই। এই সময়গুলি সুখের নয়। জুনিয়র ডাক্তারদের বলব, আপনারা একা নন। কোটি কোটি মানুষ আপনাদের সঙ্গে আছেন। সন্দীপ ঘোষরা সব জায়গায় আছেন। তাঁদের সাফাইয়ের সময় এসেছে। আপনারা শিরদাঁড়া সোজা রাখুন। বিচার পেতে সময় লাগবে। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব। এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা প্রত্যেকের শাস্তি হোক।’
আন্দোলনকে দীর্ঘতর করতে একটা যৌথমঞ্চ গড়ার প্রস্তাব দেন চিকিৎসক অর্ণব সেনগুপ্ত। সেখানে শুধু চিকিৎসক নয়, সাধারণ মানুষরাও থাকবেন। হাসপাতালগুলির ‘থ্রেট কালচার’ নিয়েও এদিন সরব হন চিকিৎসকরা। আন্দোলন নিয়ে ‘সেটিং’ হওয়ার বিষয়টি এদিন অস্বীকার করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কথায়, ‘সেটিং হয়ে গিয়েছে বলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের শিরদাঁড়া সোজা আছে। সাহস ছোঁয়াচে। তা আমাদের এক জনের কাছ থেকে অন্য জনের কাছে যাচ্ছে।’ আন্দোলনের আগুন যাতে নিভে না যায় সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গণ কনভেনশনে চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বলেন, ‘সামনে পুজো আসছে। আমরা কাউকে উৎসবে বিরত থাকতে বলতে পারি না। কিন্তু আমরা উৎসবের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত নই।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিচারহীনতার ৫০ দিন হল। আমরা কিছু পেলাম, কিছু পেলাম না। এই আন্দোলনের মুখ সকলেই। স্বাস্থ্য ভবনের ধর্না তুলে নেওয়ার পর অনেকে বলছেন, আমাদের আন্দোলন থেমে গিয়েছে। নির্যাতিতার জন্য ন্যায়বিচার ছিনিয়ে না আনা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন শেষ হয়ে গিয়েছে ভাবলে ভুল হবে।’ এদিন জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়, আরজি করের মামলা সুপ্রিম কোর্টে পিছিয়ে যাওয়ায় তাঁরা হতাশ হয়েছেন।
আরজি করের ঘটনা নিয়ে যে সব তারকারা মুখ খোলেননি তাঁদের কটাক্ষ করলেন মীর। তিনি বলেন, ‘যাঁরা মুখ খুলতে পারেন না, তাঁদের এত কীসের ভয়? পুরস্কার না পাওয়ার ভয় কি? দোষীদের ‘গারদ শুভেচ্ছা, বাকিদের শারদ শুভেচ্ছা’।