আরজি কর হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় বছর ২৮-এর এক যুবক মৃত্যুর ঘটনায় এবার মুখ খুললেন বারাসতের চতুর্থবারের তৃণমূল সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তিনি বলেন, ‘ন্যায় বিচারের জন্য অবশ্যই আন্দোলন করবো, দরকারে আমরণ অনশনে বসবো। কিন্তু চিকিৎসক হিসাবে আমার প্রথম কর্তব্য কোনও রোগী সামনে থাকলে তাঁর সেবা করা’। উল্লেখ্য, মধ্যমগ্রাম পৌরসভার পক্ষ থেকে মধ্যমগ্রামের নজরুল মঞ্চে গণেশ চতুর্থীর সন্ধ্যায় আয়োজিত হয়েছিল কৃতি ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ কাকলি এবং রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ।
আরজি করে যুবক মৃত্যু প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, ‘যে যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় ইমার্জেন্সির সামনে শুয়ে আছেন এবং তাঁর মা অঝোরে কাঁদছেন, তাঁকে দুটো সেলাই দিয়ে যদি রক্তপাত বন্ধ না করা যায় তাহলে সন্দেহ আছে আদৌ তাঁরা কতটা ডাক্তার। ভবিষ্যতে তাঁরা মানুষকে সুস্থ করে তোলার অঙ্গীকার নিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে’ নাম না করেই এদিন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন সাংসদ কাকলি। তিনি বলেন,’সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ ভুয়ো তথ্য প্রচারে ব্যস্ত। তাঁদের অবশ্যই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক রং রয়েছে। দেশের সামনে বাংলাকে ছোটো করে দেখানোই তাঁদের একমাত্র অভিপ্রায়।’ আরজি কর কান্ড প্রসঙ্গে দুঃখপ্রকাশ করে কাকলি বলেন, ‘চিকিৎসা পেশার পরিচয় দিতে গেলে আজ মনে হচ্ছে সবাই যেন আমাদের দিকে তাকাচ্ছে, কটূ কথা বলছে! এসবের বিরুদ্ধেই আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে, জড়তা কাটিয়ে উঠতে হবে।’
পাশাপাশি স্কুলে নবীনদের যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন কাকলি। ছাত্রছাত্রীদের সম্বর্ধিত করে এদিন জীবনদর্শনের পাঠ শিখিয়েছেন কাকলি ও রথীন। সমাজের পাশে না দাঁড়ালে সেই পুঁথিগত শিক্ষা মূল্যহীন, অনুষ্ঠান থেকে বিশেষ বার্তা সাংসদের। মধ্যমগ্রাম পৌরসভার এই উদ্যোগকে এদিন ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে রথীন ঘোষ বলেন, ‘কৃতি ছাত্রছাত্রীদের কী পুরস্কার দেওয়া হলো সেটি বড়ো বিষয় নয়। তাঁদের সামাজিক স্বীকৃতি দেওয়া হলো, এটিই গর্বের।’ ধরাবাঁধা গন্ডির বাইরে বেড়িয়ে শিক্ষা অর্জনের উপর জোর দিয়েছেন মন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘বিদ্যাটা সহজ, শিক্ষাটা কঠিন। বিদ্যা আবরণে, শিক্ষা আচরণে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পাঠ্যসূচিতে আবদ্ধ রাখে বলেই তাঁদের রবীন্দ্র-নজরুল পড়া হয় না, স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে ভারতীয় ঋষি মুনিদের কথা জানা হয় না।
সুতরাং প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্বন্ধে জানা উচিৎ। আজ বাংলা তথা ভারতবর্ষ যে জায়গায় পৌঁছেছে তার ইতিহাস অত্যন্ত গর্বের। সেই ইতিহাস জানতে হবে সকলের।’ উল্লেখ্য, এদিনের অনুষ্ঠানে কাকলি এবং রথীন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখার্জি ও মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ। সমগ্র অনুষ্ঠানের পরিচালনায় ছিলেন পৌরপারিষদ সদস্য অরবিন্দ মিত্র এবং মধ্যমগ্রাম পৌরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডের পৌরপিতাগণ।