অশুভ শক্তি নিধনের উদ্দেশ্যে দেবরাজ ইন্দ্রের অনুরোধে মা কালীর সৃষ্টি হয়েছিল, আজ বৃহস্পতিবার অমাবস্যায় সেই মা কালীর পুজো। আলোর রোশনাই-এ সেজে উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সদর বারাসত। এই শহরের কালীপুজোর জাঁকজমকপূর্ণতা রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশজোড়া। রকমারি থিমের মণ্ডপ, চোখ ধাঁধানো অলোকসজ্জা, মাতৃ প্রতিমা – সব মিলিয়ে একে অপরকে টেক্কা দিতে প্রস্তুত হচ্ছে শহরের বড়ো বাজেটের পুজো কমিটি গুলো। এবারের বারাসতের কালীপুজোর অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে ‘কৈলাস’। বারাসত রেল স্টেশন থেকে মাত্র ২.০৮ কিলোমিটার পশ্চিমে ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের কালীপুজোর এবারের থিম ‘কৈলাস পর্বত’। এলইডি লাইট শো-এর জন্য বিখ্যাত এই মণ্ডপের সামনেই থাকছে মানস সরোবর। ৮৭ ফুটের উচ্চতা বিশিষ্ট মণ্ডপের ভিতরে, ১৮ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের উপরে অধিষ্ঠান মাতৃপ্রতিমার। দেবীর উচ্চতা ১৫ ফুট। ভোর থেকে দিনের বিভিন্ন সময় সূর্যের আলোর ছটায় কৈলাসের মনোমুগ্ধকর রূপ আলোর মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
বারাসতের পুরাতন কালীপুজো গুলির মধ্যে অন্যতম হলো কাঠগোলা শক্তি মন্দিরের পুজো। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে বিশ্ব শান্তির বার্তা দিচ্ছে ন’পাড়া-র এই পুজো। ৬৬ বছরে পদার্পন করা এই পুজোয় তুলো এবং স্পঞ্জ দিয়ে নির্মিত হয়েছে মাতৃ মণ্ডপ। মণ্ডপের সামনেই থাকছে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার প্রতীক হিসাবে এক বিশাল আকারের পায়রা। এর পাশে রাখা হয়েছে দুটি পরি। চমক থাকছে মাতৃ প্রতিমাতেও। মাঝখানে কালী মূর্তি। একপাশে থাকছে রাম, সীতা আর হনুমান এবং অন্যদিকে শিব-পার্বতীর বিয়ে দিচ্ছেন ভগবান বিষ্ণু। থিম ভাবনা প্রসঙ্গে পুজো কমিটির প্রধান আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে চলছে অশান্তি, হানাহানি। তৈরি হয়েছে এক যুদ্ধের পরিবেশ। সেই পরিস্থিতিতে আমরা বিশ্ব শান্তির বার্তা দিতে চেয়েছি পুজো মণ্ডপের মাধ্যমে।’
এখানেই শেষ নয়, কালীপুজোর মণ্ডপ যেন হলিউড সিনেমার আস্ত সেট! জীবজন্তুর মডেল, ঝর্ণা – মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘জুমানজি’ সিনেমার কথা। বারাসতের টাকি রোড সংলগ্ন শতদল পুজো কমিটির এই ‘জুমানজি’ মণ্ডপে হলিউডের ছোঁয়া। এবছর তাঁদের পুজোর বয়স ৫৬ বছর। তিনভাগে সাজানো হয়েছে থিমের পুজোটি। উদ্যোক্তাদের দাবি, মণ্ডপের দুটি ঝর্ণা দর্শনার্থীদের বিশেষ নজর কাড়বে। মণ্ডপে প্রবেশ করলেও বাইরের অংশে পাহাড় কেটে তৈরি ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে বইবে একটি ঝর্ণা। মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশের পর প্রতিমা দর্শনের সময় পিছনে দেখা যাবে আরও একটি ঝর্ণা।
অন্যদিকে গভীর অর্থপূর্ণ বার্তা প্রদানে সেজে উঠেছে বারাসত পায়োনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাবের কালীপুজো, যা এবার পদার্পন করলো ৫২ বছরে। জীবনমুখী চিন্তাভাবনা থেকেই এবছর উদ্যোক্তাদের ভাবনা ‘লক্ষ্য’। প্রতিটি মানুষের জীবনেই থাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য। পড়াশুনো থেকে খেলাধুলা, রাজনীতি থেকে সমাজসেবা, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া জীবনে অসম্ভব সবকিছুই। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে সাপ-লুডো। এই লুডো খেলার নিয়মানুযায়ী, সাপের মুখে পড়লেই নীচে নেমে যেতে হয় আবার নির্দিষ্ট চালের মাধ্যমে মই বেয়ে ওঠা যায় ওপরে। ওপরে ওঠার টার্গেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নানা বস্তু দৃষ্টিগোচর হবে এই মণ্ডপে। পুজো কমিটির সম্পাদক বিনোদ খান্না এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘মাতৃ প্রতিমাও থাকছে নজরকাড়া। জীবনের বাস্তব ভাবনার উপর ভর করে এই মণ্ডপ নির্মিত।’ এর সঙ্গে রয়েছে চন্দননগরের আলোকসজ্জাও।