বাঘাযতীনে হেলে পড়ল চারতলা ফ্ল্যাট, চাঞ্চল্য

নিজস্ব চিত্র

গত বছরের মার্চ মাসে গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বাড়ি ভাঙার স্মৃতি এখনও তাজা কলকাতাবাসীর মনে। সেই স্মৃতি উস্কে মঙ্গলবার শহরের একটি বহুতল ভয়ঙ্করভাবে হেলে পড়ল। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনে। হেলে পড়ার পর দেখা যায়, ফ্ল্যাটের নিচের তলাটি ভেঙে পড়েছে। যদিও বাঘাযতীনের এই ঘটনায় হতাহতের কোনও খবর নেই। মঙ্গলবারই চারতলা ফ্ল্যাটটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুরসভা, পুলিশ এবং দমকল আধিকারিকেরা। তাঁদের তদারকিতেই চলছে ভাঙার কাজ।

ফ্ল্যাটবাড়িটি কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর কলোনিতে অবস্থিত। নাম শুভ অ্যাপার্টমেন্ট। ১০–১২ বছর আগে এটি তৈরি করা হয়েছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, হেলে যাওয়া ফ্ল্যাটটি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। পুরসভা সেই সময় তিনতলা ফ্ল্যাট বানানোর অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু সেই নিয়ম ভেঙে চারতলা ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়।
জানা গিয়েছে, বিল্ডিংটির প্রতি তলায় দুটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। কয়েকদিন আগে এই ফ্ল্যাটে ফাটল দেখা গিয়েছিল। সেই সময় পুর কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিন পরে আবার কয়েকজন বাসিন্দা গিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন। সম্প্রতি বিল্ডিংটি একদিকে সামান্য হেলে গিয়েছিল। এর জেরে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেন প্রোমোটার। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় ফ্ল্যাটের সব বাসিন্দারা অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই কারণে বাড়িটি ফাঁকাই ছিল বলে জানা গিয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার ও স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদের সদস্য মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়। মিতালি এদিন বলেন, ‘আমি এই এলাকায় চারতলা ফ্ল্যাট তৈরির অনুমতি দিই না। তিনতলা পর্যন্ত ফ্ল্যাট করা যায়। কিন্তু তিনতলা করলেও অনুমতি নিতে হয়। ফ্ল্যাটটি নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছিল কি না তা পুরসভার খাতা দেখে বলতে হবে। আমরা চাইব প্রোমোটারকে পুলিশ অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুক।’ অপরদিকে ৯৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা স্থানীয় বিধায়ক দেবব্রত জানান, জলাভূমি বুজিয়ে ফ্ল্যাটটি তৈরি করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘একদিকে হেলে যাওয়ায় ফ্ল্যাটবাড়ির কর্তৃপক্ষ হরিয়ানার এক সংস্থার সাহায্য নিয়ে বাড়িটি লিফ্‌ট করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি নেওয়া হয়নি। অনুমতি ছাড়াই কীভাবে এই কাজ হচ্ছিল, তা খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা পুলিশকে বলেছি তা দেখতে। আমার ধারণা ফ্ল্যাট তৈরির জন্য পুরসভার অনুমতি নেওয়া হয়নি।’ যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর মিতালি আরও জানান, যন্ত্রের সাহায্যে ফ্ল্যাটটি লিফট করানোর অনুমতি নেওয়া হয়নি।
এই ফ্ল্যাটবাড়িটির বেআইনি নির্মাণ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে একহাত নিলেন ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরএসপির প্রাক্তন কাউন্সিলর দেবাশিস মুখার্জি। তবে বেআইনি নির্মাণ রুখতে বিধায়ক দেবব্রত মজুমদারের ভূমিকার ভূয়ষী প্রশংসা করেন তিনি। তাঁর দাবি, বেআইনি নির্মাণকাজে বিধায়ক যথেষ্ট বাধা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি জানান, ২০১২ সালে ফ্ল্যাটটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালে তা হ্যান্ডওভার দেওয়া হয়। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘হেলে পড়া ফ্ল্যাটবাড়িটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। ভঙ্গুর নির্মাণ ছিল। পুরসভার নজরে আনা হয়নি। বিল্ডিংটি প্রাইভেট এজেন্সিকে দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা চলছিল। আমি ২০১৫–২০২০ সাল পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলাম। আমরা শপথ নিয়েছিলাম যে এলাকায় কোনও বেআইনি নির্মাণ করতে দেব না। যতদিন ছিলাম করতে দিইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পৌর প্রতিনিধিরা নিজেদের কর্তব্য পালন করেননি। আমরা চাই দ্রুত বিষয়গুলির নিষ্পত্তি হোক। তবে একটা কথা বলতে চাই, বেআইনি নির্মাণকাজে যথেষ্ট বাধা দিয়েছেন বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার।’