আহিরীটোলা ট্রলিব্যাগ কাণ্ডে খুলছে রহস্যের জট। ধৃতদের জেরা করে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পিসিশাশুড়ি সুমিতা ঘোষের সম্পত্তি হাতানোর উদ্দেশ্যেই শুরু হয় ফাল্গুনির একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। পিসি শাশুড়ির ব্যাংকে জমানো টাকা আর গহনার লোভে সেই অপরাধ প্রবণতা নৃশংসতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়।
জানা গিয়েছে, এমনিতেই স্বামী শুভঙ্করের দীর্ঘদিন সঙ্গে বনিবনা ছিল না ফাল্গুনির। দুজনের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলাও চলছে। তিনি থাকেন অসমের জোড়হাটে। সেখানে তাঁর একটি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকান রয়েছে। সেজন্য ফাল্গুনি মধ্যমগ্রামে তার মা আরতির সঙ্গে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকত।
এদিকে বৌমা ফাল্গুনী ও তার পিসি শাশুড়ি সুমিতা দুজনেই নিঃসন্তান। সুমিতার স্বামীও অসমের জোরহাটের বাসিন্দা। গত পাঁচ বছর স্বামীর সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই। পিসির ব্যাংকে প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে। শুধু ব্যাংকের লকারেই রয়েছে প্রায় ৭০ ভরি সোনার গহনা। এছাড়া একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে আরও প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। এই বিপুল সম্পত্তি হাতানোর লোভে ফাল্গুনী ও তার মা সুমিতাকে দেখাশোনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মধ্যমগ্রামে তাদের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর শুরু হয় সম্পত্তি হাতানোর জন্য একের পর এক কৌশল। প্রথমে সুমিতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের এটিএম কার্ডের পিন হাতিয়ে নেয় ফাল্গুনী। খুনের পর তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে নেয় অভিযুক্ত মা ও মেয়ে।
জানা গিয়েছে, যেহেতু পিসিশাশুড়ির কোনও উত্তরাধিকারী ছিল না, সেজন্য ব্যাংকের লকারে থাকা তাঁর ৭০ ভরি সোনার গহনা হাতাতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে অশান্তি শুরু হয়। এই নিয়ে রবিবার দুপুরেই অশান্তি চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ইটের ঘায়ে পিসি শাশুড়ি সুমিতাকে খুন করে ফাল্গুনী। কিন্তু দেহ সরাতে গিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। মাথা ঠান্ডা রেখে প্ল্যান সাজাতে থাকে। দেহ পাচার করতে সুমিতার আনা ট্রলিতে তারই দেহ ভরে ফেলে ভাইপোর বৌ ফাল্গুনি। প্রথমে সেটি গ্রামের দিকে কোথাও ফেলার চেষ্টা করলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলে কলকাতার আহিরীটোলা ঘাটে নিয়ে আসে। সেখানে দেহ গঙ্গায় ফেলতে গিয়েই মৃতদেহ ভর্তি ট্রলি সমেত মা মেয়ে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যায়।
এদিকে পুলিশি জেরার মুখে একটুও ভেঙে পড়েনি ফাল্গুনি। তার আচরণেও কোনও অস্বাভাকিতা নেই। পুলিশকে সে বলেছে, নারকো পরীক্ষা করলেও একই কথা বলব। এখন সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আরও তথ্য পেতে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এবিষয়ে অসমে থাকা ফাল্গুনির স্বামী শুভঙ্কর ও সুমিতার বৃদ্ধ স্বামীর এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বুধবার কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়েছিল ফাল্গুনি ও আরতিকে। বিচারক ধৃতদের একদিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁদের দুজনকে বারাসত আদালতে তোলা হবে। ব্যাঙ্কশাল আদালত কলকাতা পুলিশকে সমস্ত কেস-ডায়েরি মধ্যমগ্রাম থানার হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এ দিনই ধৃত ফাল্গুনিকে নিয়ে নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ ফরেনসিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মধ্যমগ্রামে গিয়েছিল। যে বাড়িতে ধৃতরা ভাড়া থাকতেন, সেই বাড়ির পাশের জমি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনে ব্যবহৃত ইট। বেশ কিছু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তার মধ্যো ধৃতদের মোবাইল ফোন, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এবং তাঁদের ব্যবহৃত ব্যাগ। নিহত পিসিশাশুড়ির পা যে অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছিল তা উদ্ধার করা যায়নি। এই কাজে ফাল্গুনিদের আর কেউ সাহায্য করেছিলেন কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।