কলকাতার বুকে ভুয়ো কল সেন্টারের আড়ালে প্রতারণা চক্রের কারবারের ঘটনা নতুন নয়। মাস কয়েক আগে গার্ডেন রিচে বেআইনি কল সেন্টার চালানোর জন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরই মধ্যে ফের পর পর দুই জায়গায় ভুয়ো কল সেন্টারের হদিস মিলেছে। সল্টলেকের একটি কল সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ধরা হয়েছে একটি চক্রকে। উদ্ধার হয়েছে নগদ ৬০ লক্ষ টাকা। তল্লাশি চলেছে কল সেন্টারের মালিকের বাড়িতেও। সেখানেও উদ্ধার হয় নগদ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গ সাইবার অপরাধ বিভাগ লেকটাউনের বেআইনি কল সেন্টারে রমরমিয়ে চলা আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সম্প্রতি, কলকাতা পুলিশের কাছে প্রায়ই শহরের বুকে ভুয়ো কল সেন্টারের আড়ালে প্রতারণার ঘটনার অভিযোগ আসছে। বিধাননগর থানার পুলিশের গোয়েন্দা দল একটি গোপন সূত্র থেকে জানতে পারে, সল্টলেক সেক্টর ফাইভের অদূরেই একটি বহুতলে আন্তর্জাতিক কল সেন্টারের আড়ালে চলছে প্রতারণা চক্র। সেই মতো মঙ্গলবার রাতেই হানা দেওয়া হয় ওই কল সেন্টারে। সেখান থেকেই নগদ ৬০ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে বিধাননগর থানার পুলিশ। এছাড়াও, অভিযান চালানো হয়েছিল কল সেন্টারের মালিক অবিনাশ জয়সওয়ালের বাড়িতেও। সেখান থেকে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকাসহ বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ, মোবাইলও উদ্ধার হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নথিও। পুলিশ কল সেন্টারের মালিক অবিনাশ জয়সওয়ালসহ তিনজন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের সন্দেহ, বাকি দুজন যুবকও প্রতারণা চক্রে জড়িত রয়েছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সংবিধানের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে বুধবার তাঁদের আদালতে পেশ করা হয়।
অন্যদিকে, সাইবার অপরাধ বিভাগের আধিকারিকরা গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল, লেকটাউনের একটি বহুতলে অবৈধভাবে কল সেন্টার চলছে যার আড়ালে সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় প্রতারণা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, কল সেন্টারটির নাম ‘অসটেনিক্স সলিউশনস’। এই সংস্থা থেকে ‘ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কস অফ অস্ট্রেলিয়া’-র কর্মী সেজে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের কাছে ফোন করা হত। বলা হত, অবিলম্বে অপটিক্যাল ফাইবার কানেকশন গ্রহণ না করলে তাঁরা মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাবে না। সেইমতো, অনলাইনে তাঁদের থেকে টাকা সংগ্রহ করা হত। কিন্তু পরিষেবা পেতেন না কোনো গ্রাহকই। জানা গিয়েছে, ২০২২ সাল থেকেই এই প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিলেন সংস্থার মালিক সমীর খান। সোমবার সাইবার অপরাধ উইংয়ের সদস্যেরা হানা দিয়ে ওই সংস্থায় কর্মরত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও, ২৯টি কম্পিউটার, ২৩টি মোবাইল, দু’টি ল্যাপটপ, তিনটি পেনড্রাইভ, দু’টি রাউটার, দু’টি পোর্ট, একটি হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কল সেন্টারের অন্যান্য নথিও সংগ্রহ করা হয়েছে। ধৃতদের জেরা চলছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।