• facebook
  • twitter
Saturday, 19 October, 2024

শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালে বিধ্বংসী আগুন, দমবন্ধ হয়ে মৃত ১ রোগী, দাবি পরিবারের

এই ঘটনায় মলয় ঘটক মন্তব্য করেন, 'যে ফ্লোরটা নষ্ট হয়েছে সেই ফ্লোরটা যাতে তাড়াতাড়ি সারানো যায় তার জন্য আমি আজকেই দুপুর ১২ টার সময় মিটিং ডেকেছি, সেখানে ইএসআই ডিরেক্টর ছাড়াও ইএসআই–এর অন্যান্য উচ্চ পদস্থ অফিসারকেও ডাকা হয়েছে, যাতে অতিদ্রুত হাসপাতালকে তার পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়।'

ফের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের কবলে কলকাতার হাসপাতাল। শুক্রবার ভোর ৫ টা নাগাদ শিয়ালদহ ইএসআই হাসপাতালের দোতলা থেকে ব্য়াপক ধোঁয়া বেরোতে দেখেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যায়।

কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারিদিক। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১০ টি ইঞ্জিন প্রায় ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর সকাল ৭ টা ৪০ মিনিট নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় নারকেলডাঙা থানার পুলিশ। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে পৌঁছে যান রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৮০ জন রোগী। যেহেতু ভোরবেলা আগুন লেগেছে, বেশিরভাগ রোগীই ওইসময়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। অবশ্য আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় অধিকাংশ রোগীকে। অনেক রোগীকেই মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের জেরে বৃহস্পতিবারের জন্য হাসপাতালের বর্হিবিভাগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে অনেকে আগেই দূর-দূরান্ত থেকে হাসপাতালে পৌঁছে যান, তাঁদের ফিরে যেতে হয়। তবে ঠিক কী কারণে এমন বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আগুনের সম্ভাব্য উৎসস্থল হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ড বা তার আশপাশ।

কার্যত, শুক্রবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর হাসপাতাল চত্বরে খোলা আকাশের নীচে কয়েকজন রোগীকে রাখা হয়। সেই সময়ই আগুনের কালো ধোঁয়ায় বনগাঁ থেকে আসা এক এক পঞ্চাশোর্ধ ক্যান্সারাক্রান্ত রোগী উত্তম বর্ধন শ্বাসকষ্টে মৃত্যুবরণ করেন বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। তাঁদের মতে, আগুন লাগার পরে কালো ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই রোগী, যাঁকে সংকটজনক অবস্থায় অন্যত্র স্থানান্তর করা হয় এবং পরে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে হাসপাতালের সুপার অদিতি দাস এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে শ্বাসকষ্টের কারণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, আগুন লাগার কারণে কারও মৃত্যু হয়নি। অন্যান্য সব রোগীই সুরক্ষিত।

এই ঘটনায় মলয় ঘটক মন্তব্য করেন, ‘যে ফ্লোরটা নষ্ট হয়েছে সেই ফ্লোরটা যাতে তাড়াতাড়ি সারানো যায় তার জন্য আমি আজকেই দুপুর ১২ টার সময় মিটিং ডেকেছি, সেখানে ইএসআই ডিরেক্টর ছাড়াও ইএসআই–এর অন্যান্য উচ্চ পদস্থ অফিসারকেও ডাকা হয়েছে, যাতে অতিদ্রুত হাসপাতালকে তার পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া যায়।’

ইএসআই–এর বিভিন্ন বিভাগের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ইএসআইসি সেন্ট্রাল গভর্মেন্টের একটি অর্গানাইজেশন, তাই যাঁরা কাজ করছে এটা তাঁদের দায়িত্ব। যদি দেড় বছর আগে কাজ শেষ হতো তবে হয়তো এধরনের ঘটনা ঘটত না।’

এই ঘটনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘ইএসআই হাসপাতালে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দমকলকর্মীরা সুরক্ষিতভাবে সকলকে উদ্ধার করেছে।’ দমকলকর্মীদের প্রাথমিক ধারণা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) শর্ট সার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে হাসপাতালের পরিকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, এদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি বলেন, আগুন কীভাবে লাগল তা ফরেন্সিক টিমকে দিয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। এছাড়া একজন রোগী মৃত্যুর যে ঘটনা ঘটেছে তা কীভাবে হল, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান মনোজ ভার্মা। তাঁর কথায়, ময়নাতদন্তের পরই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।