• facebook
  • twitter
Tuesday, 7 January, 2025

দর্পনির সৃজনোৎসব ২০২৪

কৃষ্ণের প্রাথমিক জীবনে বিশেষত শিশুকালে গোপীদের সঙ্গে মিলিতভাবে তাঁর সকল কর্মকান্ড ঐশ্বরিক প্রেম, সহানুভূতির সর্বোচ্চ রূপের উদাহরণ দেয়।

সৃজনোৎসব ২০২৪-এর তৃতীয় অধিবেশনের এই বিশেষ অনুষ্ঠানের বিবরণ সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এর মূল বিষয়বস্তু “ত্রয়ী” বা তিনটি শাস্ত্রীয় নৃত্যের ঐতিহ্যকে উদযাপন করা—ওড়িশি, কথক এবং ভরতনাট্যম—প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র্য এবং গভীরতাকে তুলে ধরেছে। দর্পণীর এই অনুষ্ঠানে তিনটি অসাধারণ পরিবেশনা ছিল শ্রীতা কমলার। এটি জয়দেবের গীতগোবিন্দের প্রথম শ্লোক নৃত্য, পরিকল্পনা ও কোরিওগ্রাফি অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

দ্বিতীয় নৃত্য পরিবেশন দেখো গো সখি এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ওড়িশি নৃত্য এবং তৃতীয় নৃত্য পরিবেশন কৃষ্ণায় তুভ্যং নমঃ হিন্দু ঐতিহ্য-এ দশ অবতার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। যখন যখনই আসুরিক শক্তি সৃষ্টির ভারসাম্যকে বিনষ্ট করতে চেষ্টা করেছে ঠিক তখনই ঐশ্বরিক শক্তি আবির্ভুত হয়ে তাকে ধ্বংস করে মহাজাগতিক ভারসাম্য বজায় রেখেছে এটিই নির্দেশ করে ‘দশ অবতার’। প্রকৃতপক্ষে মানবতার আধ্যাত্মিক যাত্রার ঐশ্বরিক প্রতিচিত্র প্রদান করে।

‘কৃষ্ণ কথা’, একটি নৃত্য রুপ যা ভগবান কৃষ্ণের দশ অবতারকে তুলে ধরে, যিনি স্বয়ং মানবজগতের রক্ষাকর্তা ও মানবজগতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য বিভিন্ন রূপে তিনি আবির্ভুত হয়েছেন। ভগবান কৃষ্ণকে ঐশ্বরিক শক্তি ও একজন সহানুভূতিশীল পথপ্রদর্শক উভয় হিসেবেই গণ্য করা হয় যিনি ধর্ম, ন্যায়পরায়ণতা, ভক্তি, কর্ম ও আত্মপলব্ধির পথকে আলোকিত করেন।

মথুরার কারাগারে ভগবান কৃষ্ণের জন্মের সময় থেকে তাঁর জীবন ও দর্শন সারা বিশ্বে আজও লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে ও ভবিষ্যত প্রজন্মেও তা অক্ষুন্ন থাকবে। তিনি আমাদের প্রেম, অখন্ডতা এবং অভন্তরীণ শান্তির সাধনার নিরন্তর শিক্ষা প্রদান করেন। ভক্তরা বিশ্বাস করেন কৃষ্ণ ভক্তির দ্বারা তারা মুক্তি লাভ করে ঈশ্বরের সঙ্গে একত্রিত হতে পারবেন।

কৃষ্ণের প্রাথমিক জীবনে বিশেষত শিশুকালে গোপীদের সঙ্গে মিলিতভাবে তাঁর সকল কর্মকান্ড ঐশ্বরিক প্রেম, সহানুভূতির সর্বোচ্চ রূপের উদাহরণ দেয়। একই সাথে ভগবত গীতায় ধর্ম, ভক্তি ও কর্মের যে শিক্ষা তিনি আমাদের দিয়েছেন তা সময় ও ভৌগোলিক দূরত্বকে অতিক্রম করে বিশ্বজুড়ে অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

নৃত্যরূপটি সম্পূর্ণ সৃষ্টিতে সর্বত্র কৃষ্ণের উপস্থিতিকে প্রতিফলিত করে, ধ্বংস ও সৃষ্টি উভয়ের উৎস হিসেবে জীবনের চিরন্তন চক্রকে নির্দেশ করে। দর্পণির নৃত্য পরিবেশনার পর ভরতনাট্যম প্রথম পরিবেশনা করেছিলেন শুভজিৎ দত্ত, সায়ন সরকার, এবং করুণকেতন ভক্ত।

তার পর ওড়িশি পরিবেশনা করেছিলেন সায়মিতা দাশগুপ্ত, রাজনীতা মেহরা, এবং সংযুক্তা রায় ঘোষালের পরিবেশনা। সমাপ্তি পরিবেশনায় কথক নৃত্যে ছিলেন সৌরভ রায়, সুব্রত পণ্ডিত, এবং সৌভিক চক্রবর্তী।

গান মঞ্চে অনুষ্ঠিত এই সৃজনোৎসব ২০২৪ ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের ঐতিহ্য ও সৃজনশীলতাকে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। দর্পণির এবং অন্যান্য শিল্পীদের নিবেদন সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।