‘দ্রোহ’-এর আবহে জমজমাট কার্নিভাল

প্রতিকি ছবি (Photo: IANS)

আসছে বছর আবার হবে। ফের একটা বছরের অপেক্ষা। আবারও শুরু প্রহর গোনা। এ বছরের মতো পুজো শেষ। আকাশে-বাতাসে বিষাদের সুর। আনন্দ-উৎসব শেষে এবার একঘেয়ে জীবনে ফেরার পালা। এই আবহে শত মন খারাপ, এক রাশ দুঃখকে দূরে সরিয়ে রেখেই মহাসমারোহে আয়োজিত হল কার্নিভাল। আবারও সেজে উঠল শহরের রাজপথ। জমকালো আয়োজন, জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বিদায় জানানো হল উমাকে।

এ বছর কার্নিভালে ৯০টিরও বেশি পুজো অংশগ্রহণ করে। ছাপা হয় ২৮ হাজার আমন্ত্রণপত্র। রেড রোডের বুকে জমিদার বাড়ির আদলে রাজকীয় ঘরানায় তৈরি হয় মূল মঞ্চ। এই মূল মঞ্চেই ছিল ব়্যাম্প। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েক মিনিট আগেই মঞ্চে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিশেষ অতিথিদের জন্য ছিল পৃথক বসার ব্যবস্থা।
সঙ্গীত এবং নৃত্য পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কার্নিভালের মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘পুজোর গান’। মঞ্চে সঙ্গীতশিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শোনা যায় গানটি। গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। মঞ্চ থেকে মমতার লেখা এই গানটিকেই কার্নিভালের সেরা পুজোর গান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নিজের লেখা গানে নৃত্য পরিবেশনা শেষ হতেই হাততালি দিয়ে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত অতিথি এবং সাধারণ মানুষের হাতহালিতে গমগম করতে থাকে রেড রোড চত্বর।

এরপর একে একে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে ব়্যাম্পে হাজির হতে থাকে বিভিন্ন ক্লাবের পুজো। প্রথমেই কার্নিভালে প্রবেশ করে বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ। এর পর দমদম তরুণ দল। বিশেষ নজর কাড়ে কালীঘাটের ‘ফরওয়ার্ড ক্লাব’, আলিপুর রোডের ‘কোলাহল গোষ্ঠী’। প্রত্যেকটি পুজোর থিম, প্রতিমা এবং শোভাযাত্রা মুগ্ধ করে উপস্থিত অতিথি এবং দর্শকদের।


এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কখনও তাঁর কণ্ঠে শোনা গিয়েছে গান, কখনও বা গানে গানে পা মেলাতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে। কার্নিভালেও ফের সেই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল শহরবাসী। পুজোর থিমে উঠে আসে ডান্ডিয়া নাচ। অন্যদের সঙ্গে সেই ডান্ডিয়া নাচেও অংশ নিতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

কার্নিভাল উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এ বছরও রেড রোডে উপস্থিত ছিলেন এক ঝাঁক তারকা। ছিলেন তৃণমূলের তারকা সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নী ঘোষ, জুন মালিয়া, তারকা বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্নিভালের মঞ্চে দেখা যায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ নুসরত জাহানকেও। গানের তালে কোমর দোলাতে দেখা যায় তাঁকে। এর পাশাপাশি শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের শোভাযাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করেন সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। নজর কাড়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর নৃত্য পরিবেশনাও। এছাড়াও দেখা যায় ছোট পর্দার তারকাদেরও। ছিলেন সৌমিতৃষা কুণ্ডু, শ্রীতমা ভট্টাচার্য, প্রিয়া, সুভদ্রা মুখোপাধ্যায়।

শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। প্রত্যেক বছর আকারে ও জমকে তা পাল্টেছে। বদলেছে ধরনও। তবে প্রতি বছর কার্নিভালের জনপ্রিয়তা যেন বেড়েছে আরও বেশি করে। বিশেষ করে ২০২২ সালে কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এই কার্নিভালও যেন আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রূপে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও জমকালো কার্নিভাল দেখল রাজ্যবাসী। এক উৎসব শেষে যেন আরও একটা উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে সাধারণ মানুষ। সুসজ্জিত শোভাযাত্রা, আলোর খেলা, নাচে-গানে-কবিতায় তুলে ধরা হয় বাংলার ঐতিহ্যকে। রেড রোডে ফের শোনা যায় ‘বলো দুগ্গা মাইকি জয়’।

একদিকে যখন পুজোর কার্নিভালে মেতে ওঠে গোটা শহর, ঠিক তখনই বিজয়া সম্মিলনীর ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেস। একটি ভিডিও বার্তায় কুণাল ঘোষ বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজয়া সম্মিলনীতে নামবেন। নিবিড় জনসংযোগ করবেন তাঁরা। যদিও এ বিষয়ে তৃণমূলের তরফে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। কুণালের কথায়, বিরোধীদের কুৎসার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করতে বাম জমানার অবস্থা এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির অবস্থার কথা তুলে ধরা হবে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে।