কলকাতা পুরসভা জলবায়ু নিয়ে আলাদা কর্ম পরিকল্পনা নেবে

নিজস্ব চিত্র

স্নেহাশিস সুর

বাকুর ‘কপ’-এ উঠে এল কলকাতা, রইল সুন্দরবন। ‘কপ’ মানে কনফারেন্স অফ পার্টিস। মানে রাষ্ট্রসঙ্ঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। তার ২৯তম অধিবেশন মানে ‘কপ-২৯’ সদ্য শেষ হল আজারবাইজানের রাজধানী বাকু-তে। এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা। সেই সঙ্গে ছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, অসরকারি সংস্থা এবং জলবায়ু বা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন সংস্থা। সম্মেলনের মূল অধিবেশনের পাশাপাশি তারা তাদের স্টল করে সেখানে লোকজনকে তাদের কাজকর্মের কথা শুনিয়েছে, অথবা তারাও বিভিন্ন আলোচনাচক্রের আয়োজন করছে। সেখানে বক্তব্য রেখেছেন বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইউ এন হ্যাবিটাট সেন্টার ‘কপ-২৯’-এ একটি আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের ব্যবস্থা করে। যার বিষয় ছিল নগরায়ন ও উষ্ণায়ন। এতে বক্তব্য রাখেন কলকাতা পুরসভার মেয়র-ইন কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধায়ক দেবাশিস কুমার। তিনি বলেন, কলকাতা হল এশিয়ার মধ্যে প্রথম শহর, যারা শহরাঞ্চলে কয়লা ব্যবহার বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। সেই সঙ্গে কলকাতা তার নিজস্ব জলবায়ু সংক্রান্ত কর্মসূচি রূপায়ণের দিকে এগোচ্ছে এবং খুব তাড়াতাড়ি কলকাতা জলবায়ু কর্ম পরিকল্পনা প্রকাশিত হবে। তিনি জানান, ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-র সর্বশেষ প্রতিবেদনে কলকাতা শহরকে এশিয়ার অন্যতম সমস্যাসঙ্কুল শহর হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যে অর্থ বরাদ্দ হবে, তার একটা অংশ কলকাতা সহ বিভিন্ন পুরনো শহরের জলবায়ু ও পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা রূপায়নের জন্যও দেওয়া হবে।


এছাড়াও এই সম্মেলনের মূল অধিবেশনের পাশাপাশি ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সাউথ এশিয়া (ক্যানসা) শহরাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করে। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেবাশিস কুমার জানান, কলকাতার ৫০ লক্ষ স্থায়ী বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশই বাস করে বস্তি অঞ্চলে। জলবায়ু ও পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁরাই সমস্যায় পড়েন সবচেয়ে বেশি। তিনি জানান, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গেছে, বস্তিবাসীদের ৭০ শতাংশই উষ্ণায়ণের সমস্যায় প্রভাবিত। কলকাতার প্রায় অর্ধেক এলাকাও এই সমস্যার কবলে। পুরসভা শহরের জলবায়ু ও পরিবেশ সংক্রান্ত যে কর্ম পরিকল্পনার প্রকাশ করতে যাচ্ছে, তাতে এইসব সমস্যা সমাধানের একটা রূপরেখা থাকবে।

অন্যদিকে ‘কপ-২৯’-এর পার্শ্ববর্তী বৈঠক হিসেবে সুন্দরবনের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা হয়। এর ফলে যে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হচ্ছে এবং অনেক দ্বীপ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে এবং বাসিন্দারা এখান থেকে অন্য জায়গায় সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই বিষয়েও সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

‘কপ-২৯’-এ কলকাতা ও সুন্দরবন যখন আলোচনার বিষয় হিসেবে উঠে এল, তখন চোখে পড়ল ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রীর অনুপস্থিতি। এছাড়াও সমস্ত ছোটখাটো দেশও যেমন তাদের নিজস্ব প্যাভিলিয়ন করেছে, ভারত কিন্তু সেখানেও অনুপস্থিত।