রাজ্যের ৬ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন

আরজি কর কাণ্ডের আবহে রাজ্যের পরিস্থিতি এখন উত্তাল। পথে নেমেছেন চিকিৎসকেরা। দিকে দিকে চলছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। এই আবহেই বাংলার ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যেই এ রাজ্যে বিধানসভা উপনির্বাচনের ডঙ্কা বেজে গেল।

আগামী ১৩ এবং ২০ নভেম্বর দুই দফায় উপনির্বাচন রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। ২০ নভেম্বর এক দফায় ভোটগ্রহণ মহারাষ্ট্রে। ১৩ নভেম্বরই বাংলার ছ’টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে বলে ঘোষণ করেছে নির্বাচন কমিশন। তালডাংরা, সিতাই, নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর ও মাদারিহাট বিধানসভা আসনে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফল ঘোষণা ২৩ নভেম্বর।

পশ্চিমবঙ্গের এই ৬টি আসনের বিধায়কেরাই শেষ লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হয়েছেন। হাড়োয়া আসনের বিধায়ক পদ ছেড়ে বসিরহাটের সাংসদ হয়েছিলেন হাজি নুরুল ইসলাম। তবে সম্প্রতিই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাই বিধায়কহীন হাড়োয়ায় উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত। তবে বসিরহাট লোকসভা আসনে আপাতত এই দফায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে।


এই ৬টি আসনের মধ্যে একটি ছিল বিজেপির দখলে। ২০২১ সালে মাদারিহাটের বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন মনোজ টিগ্গা। চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে আলিপুরদুয়ার থেকে জয় পেয়ে তিনি আপাতত সাংসদ। সেই থেকে মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্র বিধায়কহীন। তাই আগামী ১৩ নভেম্বর এই মাদারিহাটেও রয়েছে উপনির্বাচন।

লোকসভা নির্বাচনের আগে বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টার্গেট ছিল উত্তরবঙ্গ। সেই মতোই চলেছে প্রচার, উন্নয়নের আশ্বাস। লোকসভা নির্বাচনে হাতেনাতে তার ফলও মিলেছে। উত্তরে তুলনামূলক ভালো ফল করেছে তৃণমূল। বিধানসভা উপনির্বাচনেও সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছে না ঘাসফুল শিবির। মাদারিহাট এতদিন বিজেপির দখলে থাকলেও সেই জায়গায় এবার পদ্মফুল উপড়ে ঘাসফুল ফোটাতে চাইছে তৃণমূল।

অন্যদিকে কোচবিহারে সিতাইয়ের বিধায়ক পদ ছেড়ে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছেন জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। খালি হয়েছে নৈহাটির বিধায়ক পদ। কারণ ব্যারাকপুরের সাংসদ পদে নির্বাচিত হয়েছেন পার্থ ভৌমিক। অন্যদিকে জুন মালিয়া সাংসদ হওয়ায় খালি হয়েছে মেদিনীপুর বিধানসভা আসন। এছাড়াও অরূপ চক্রবর্তী সাংসদ পদ পাওয়ার পর বিধায়কহীন হয়ে পড়েছে তালড্যাংড়া বিধানসভা।

ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ৬টি কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচনও রাজ্যের শাসকদলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আরজি কর কাণ্ডের আবহে বিরোধীদের চাপে পড়ে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে তৃণমূল। বিশেষ করে শাসকদলের বিরুদ্ধে খর্গহস্ত কলকাতাবাসী। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই আসরে নেমেছে বিরোধীরা। কিন্তু একটু গ্রামাঞ্চল বা মফঃস্বলের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, আরজি কর কাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে দাগ কাটতে পারলেও তৃণমূলের চাহিদা এবং মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা এক বিন্দুও কমেনি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই বরাবরই মহিলা ভোট ব্যাঙ্ককে টার্গেট করে থাকে রাজনৈতিক দলগুলি। তৃণমূলও তার ব্যাতিক্রম নয়। আসন্ন বিধানসভা উপ নির্বাচনে তৃণমূলের স্ট্র্যাটেজি এখনও ঠিক না হলেও মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক তাদের গুরুত্বের তালিকার শীর্ষে থাকবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।