আরাধনার পর অবহেলায় দেবী, রাস্তার ধারে পড়ে প্রতিমা

কুমোরটুলি ঘাটের গা বেয়ে রাস্তা চলে গিয়েছে শোভাবাজারের দিকে। দশমীর রাতে সেই রাস্তায় চলতে চলতে দেখা মিলল আরাধিত দেবীর হৃদয়বিদারক রূপের। রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে দেবী মূর্তি পড়ে রয়েছে অবহেলায়। এলোমেলো বস্ত্র, মুকুট নুইয়ে পড়েছে। জলে ভিজে প্রতিমার কিছু অংশের মাটি গলে পড়ছে। এহেন  বিধ্বস্ত, বিসর্জিত মাতৃ প্রতিমা রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখলে বাঙালির মন খারাপ হতে বাধ্য।
দুর্গাপুজোর বিসর্জনে কলকাতা পুরসভার তরফে প্রতিবছরই বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিসর্জনের সময় পুজোর বিভিন্ন সামগ্রী সমেত প্রতিমা নদীতে গিয়ে পড়লে তা থেকে বিপুল জলদূষণের সম্ভবনা থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিমার গায়ে লাগানো সীসাও ব্যাপক ক্ষতিকারক। সেই সম্ভবনাকে রুখতেই সরকারের তরফে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। প্রতিমা গঙ্গায় ফেলা মাত্রই তা ক্রেন দিয়ে তুলে আনা হয় ৷ সেই কাঠামো ডাম্পারে তুলে ধাপায় পাঠানো হয় ৷ বিসর্জন যাতে দূষণহীন হয়, সেদিকে নজর রাখতে প্রতিটা ঘাটে হাজির থাকেন প্রশাসনিক কর্তারা। ফুল সহ পুজোর সামগ্রী ফেলার জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়। এবছরও তার অন্যথা হয়নি। তবুও কেন এই দশা? প্রশ্নের উত্তরে জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘এগুলো কিছু সংখ্যক প্রতিমা শিল্পীদের কাজ। মূর্তির কাঠামোকে পুনরায় ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে সেগুলি ঘাট থেকে তুলে নিয়ে আসেন তাঁরা।’ পুরসভা সূত্রে দাবি, বিসর্জনের গোটা প্রক্রিয়াটাই নিয়মমাফিক হয়েছে। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই সবটা সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে দু-এক জায়গায় এরকম ঘটনা ঘটেছে। বিসর্জনের পরে কুমোরটুলি ঘাট এবং মায়ের ঘাট সংলগ্ন এলাকায় মূলত এই ধরণের চিত্র ধরা পড়ে।
কলকাতা পুরসভার তরফে এবছর গঙ্গার ঘাটগুলিতে ঘুরে সমগ্র পরিস্থিতি নিজের চোখে পর্যবেক্ষণ করেন কলকাতা পুরনিগমের মেয়র তথা নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ৷ বিসর্জন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না তা স্পিড বোটে করে সরেজমিনে খতিয়ে মেয়র ৷ প্রতিটা ঘাটে উপস্থিত ছিলেন পুরনিগমের কর্মীরা৷ তবুও তাঁদের চোখের আড়ালে কীভাবে এই কাঠামোগুলি বেরিয়ে গেল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।