ধরনা মঞ্চ উঠে যাওয়ার পরেই স্বাস্থ্যভবন চত্বরে প্রতিবাদের ভাষায় পড়ল ‘আলকাতরার প্রলেপ’

টানা ১১ দিন জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভের পর শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের কর্মবিরতি আংশিক প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করে জুনিয়র চিকিৎসক সংগঠন। তবে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁদের আন্দোলন জারি থাকবে, সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দেয় তাঁরা। কিন্তু এই আবহে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর শনিবার সকালে স্বাস্থ্যভবন চত্বরে দেখা গেল এক অন্যরকম ছবি। কার্যত স্বাস্থ্যভবন চত্বরে টানা ১১ দিন ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিবাদের অস্থায়ী দুর্গমঞ্চ তৈরি হয়েছিল। ত্রিপল টাঙিয়ে রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তাতেই বসে ছিলেন তাঁরা।

স্বাস্থ্যভবনের দেওয়াল থেকে শুরু করে রাস্তা, বাড়ির দেওয়াল, জানালা এমনকি ম্যানহোলের ঢাকনাকেও রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রতিবাদের রং–এ। নির্যাতিতার প্রতিকী ছবি থেকে শুরু করে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এমনকি প্রশাসনকে প্রশ্ন করে প্রচুর স্লোগান লেখা হয়েছিল রাস্তা জুড়ে। কিন্তু রাতারাতি প্রতিবাদের ভাষা সাফ করে দেওয়া হল স্বাস্থ্যভবনের রাস্তা থেকে।

শনিবার সকালে স্বাস্থ্যভবন চত্বরের রাস্তায় দেখা গেল, সমস্ত প্রতিবাদী স্লোগান ও প্রতীকী ছবিগুলি মুছে ফেলা হয়েছে। দেওয়াল লিখন ঢাকা হয়েছে নীল রঙে। রাস্তায় লেখা স্লোগানের ওপর লেপে দেওয়া হয়েছে আলকাতরা। আন্দোলনের সব চিহ্ন যে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। একদিন আগেও যে রাস্তা আন্দোলনে মুখর হয়েছিল, একরাতের মধ্যে তার চিত্র পুরোটাই পাল্টে গিয়েছে।


এদিকে আন্দোলনের স্লোগান মোছা প্রসঙ্গে অভিনেতা তথা আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘স্লোগান মুছে দিয়ে কি আন্দোলন মোছা যায়? আন্দোলনের ভাষা মানুষের ভিতরেই রয়েছে। সেগুলিকে কেউ মুছতে পারবে না। এই যেগুলি মুছে দিচ্ছে সেগুলি প্রতীকী মোছা। এগুলো নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না তাই। আমরা প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, আন্দোলনের যে আগুন জ্বালিয়ে দিতে পেরেছি, যে ভাষা লিখতে পেরেছি সেই ভাষা আলকাতরা বা কোনও কিছু দিয়েই মুছে ফেলা যাবে না।’

প্রসঙ্গত, গতকাল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা আরজি কর থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের চাপে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরজি করের কুখ্যাত প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। টালা থানার ওসি এবং পদচ্যুত হয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তা ছাড়া হাসপাতালের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকা পেলেও বহু দাবি পূরণ হওয়া এখনও। তার মধ্যে মূল হল চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার বিচার।’

এরপর চিকিৎসকদের তরফ থেকে ডঃ পারমিতা ভাণ্ডার আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনের সঙ্গে জুড়েছিলেন এমন প্রচুর মানুষ, যাঁরা এখন বন্যাবিধ্বস্ত। আমরা তাঁদের জন্য ‘অভয়া ক্লিনিক’ খুলেছি। সেখানে চিকিৎসা পাচ্ছেন তাঁরা। আমরা শনিবার থেকে জরুরি পরিষেবা দিতে ফিরছি। আজও আমাদের জেনারেল এমার্জেন্সি বিভাগ ধ্বংসস্তুপের আকারেই রয়েছে।’