লখনউ, ২১ ফেব্রুয়ারি— মহাকুম্ভ শুধুই ধর্ম নাকি এর পিছনে রয়েছে বিরাট ব্যবসা। এই বিতর্কের মাঝেই মহাকুম্ভের সাফল্য ব্যাখ্যা যোগী আদিত্যনাথের। শুক্রবার বিধানসভা অধিবেশনে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বাণিজ্যের নিরিখেও মহাকুম্ভের সাফল্য অনস্বীকার্য। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা এই উৎসব রাজ্যের অর্থনীতিতে যুক্ত করেছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। তবে যোগী যতই ঢক্কানিনাদ করুন না কেন, বিরোধীরা কিন্তু বলছে এই পরিসংখ্যান দিয়ে মহাকুম্ভের পদপিষ্টের ঘটনা থেকে দূষণ পর্ষদের রিপোর্টকে ধামাচাপা দেওয়া যাবে না।
উত্তরপ্রদেশের বাজেট অধিবেশনে খোদ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই তথ্য প্রকাশের আগেই অবশ্য এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনেছে কনফেডারেশন্স অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি)। তাদের দাবি অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মের বিরাট এই উৎসব সংগঠিত করতে রাজ্য সরকারের খরচ হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা। তার পরিবর্তে রাজ্যের ভাণ্ডারে এসেছে ৩ লক্ষ কোটি টাকা। সিএআইটির মতে, মহাকুম্ভের জন্যে শুধু প্রয়াগরাজ নয়, বারাণসী, অযোধ্যা-সহ প্রায় ১৫০ কিমি পরিধি জুড়ে ব্যবসা বেড়েছে। ভারতে একটি মেলা ঘিরে বিপুল ব্যবসা নজিরবিহীন।
সিএআইটি-এর সম্পাদক প্রবীণ খণ্ডেলওয়াল জানিয়েছেন, পণ্য-পরিষেবা কিনতে প্রয়াগরাজে যত সংখ্যক মানুষ ভিড় করেছেন, তা বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায়নি। শুধু মহাকুম্ভ থিমের কলম, জামাকাপড়, খাতা, ঘর সাজানোর পণ্য, ক্যালেন্ডার, ব্যাগের মতো সামগ্রী বিক্রি হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকার। ইতিমধ্যেই ৫৫ কোটির বেশি মানুষ মেলায় এসেছেন, আর ব্যবসার অঙ্ক প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁয়েছে। যা উত্তরপ্রদেশের অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, এর সুফল পাবে সংলগ্ন বিহার, উত্তরাখণ্ড ও দিল্লিও।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের বাজেট অধিবেশনেও এই তথ্য তুলে ধরেছেন যোগী। বিজেপির সময়কালে উত্তপ্রদেশ কীভাবে অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হয়েছে সেই কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার বাইরে এসেছে। শেষ ৮ বছরে রাজ্যের ৬ কোটি মানুষকে আমরা দারিদ্রসীমার বাইরে এনেছি। রাজ্যের সমস্ত সেক্টরকে উন্নত করা হয়েছে। নারীক্ষমতায়নেও পিছিয়ে নেই আমরা। ২০ শতাংশ মহিলাকে রাজ্য পুলিশে নিয়োগ করা হয়েছে। আজ দেশ তথা বিশ্ব দেখছে উত্তরপ্রদেশ কতটা সম্ভাবনাময় রাজ্য। সফলভাবে মহাকুম্ভ আয়োজন করেছি আমরা। উত্তরপ্রদেশের অর্থনীতিতে ৩ লক্ষ কোটি টাকা যুক্ত করেছে শুধু মহাকুম্ভ।’
তবে এতো পরিসংখ্যান দেওয়া সত্বেও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে ছেড়ে কথা বলছেন না বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করছে যোগী সরকার। আর্থিক সাফল্য তুলে ধরে যোগী যে অর্থনীতির ঢাক পেটাচ্ছেন, তাতে কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা মাফ হয়ে যায় না। প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভমেলা শুরু হওয়ার পর একের পর এক ঘটনা ঘটেছে। মেলায় আগুন লাগার ঘটনা থেকে চূড়ান্ত গাফিলতির কারণে ২৯ জানুয়ারি কুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০জন মারা গিয়েছিলেন। সরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ জন বলা হলেও বেসরকারি মতে এই সংখ্যাটা ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমনকী সংসদে সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন জানিয়েছিলেন, কুম্ভমেলায় জল দুষিত হয়েছে কারণ পদদলিত হয়ে মৃতদের প্রয়াগরাজে নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কুম্ভমেলাকে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ বলে অভিহিত করেছেন। এর উপর সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, তাতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রয়াগরাজে গঙ্গার জল স্নান করার উপযুক্ত নয়। এই নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনা করলেও, যোগী আদিত্যনাথ যে কিছুটা হলেও চাপে আছেন তা পরিষ্কার। সেই কারণে কুম্ভমেলা ঘিরে আর্থিক সাফল্য তুলে ধরে তিনি নিজের মুখ বাঁচাতে চাইছেন, এই অভিযোগ বিরোধীদের।