দিল্লি, ১১ জানুয়ারি – ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক সংঘাতের পথে এগিয়েছে। মলদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সমীকরণ যখন অবনতির দিকে, তখন মলদ্বীপের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট তথা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতা। চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সে দেশে সফররত মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুকে আশ্বাস দিয়েছেন, দ্বীপরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সবরকম ভাবে সাহায্য করা হবে। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে দিল্লি-মলদ্বীপের কূটনৈতিক সম্পর্কে চিড় ধরেছে। এই আবহে সক্রিয় ভূমিকা নিল বেজিং। পাঁচ দিনের চিন সফরে সেখানে যান মুইজ্জু। সফরের তৃতীয় দিনে বুধবার জিনপিংয়ের সঙ্গে বেজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে মলদ্বীপের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন চিনের প্রেসিডেন্ট। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বৈঠকেই বেজিংকে তাঁদের ‘পুরনো বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বলেন মুইজ্জু। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক আর্থিক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত কয়েকটি চুক্তি সই হয় বলে চিনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের দাবি।
কূটনৈতিক মহলের অনুমান, এক্ষেত্রে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চিন। জিনপিংয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট, এ বার দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক বলয়ে অনুপ্রবেশের পরিকল্পনা করছে চিন । অতীতে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে এমনই ভূমিকায় দেখা গেছে চিনকে ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ধাক্কায় জেরবার দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকে মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন ভারতীয় পর্যটকেরা। এই পরিস্থিতিতে চিন সফরে গিয়ে মঙ্গলবার মুইজ্জু চিনা সরকারের এবং সে দেশের বণিকসভার প্রতিনিধিদের কাছে পর্যটনে সহায়তার জন্য আবেদন করেন। জানিয়েছিলেন, করোনা পর্বের আগে চিন ছিল তাঁদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী। তিনি চান সেই পরিস্থিতি আবার ফিরে আসুক।
গত সেপ্টেম্বরে মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি -র নেতা ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রেসিডেন্ট হন মুইজ্জু। সেই ভোট সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইলেকশন অবজ়ারভেশন মিশন’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে মুইজ্জু ও তাঁর সহযোগীদের ভারত-বিরোধী বলে উল্লেখ করেছে। চিনের মদতেই মুইজ্জু শিবির ধারাবাহিক ভাবে ভারত বিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয় ওই রিপোর্টে।
মুইজ্জু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেন। যা নিয়ে দিল্লি-মলদ্বীপ টানাপোড়েনের পরিস্থিতি। এই আবহেই সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপে যান মোদি । সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ, মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী, মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ কিছু ছবিতে মোদিকে ‘পুতুল’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের কারণে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মলদ্বীপের বিরোধী নেতাদের চাপের মুখে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। এই পরিস্থিতিতে মলদ্বীপের বিরোধী দলগুলি অবশ্য ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে।