• facebook
  • twitter
Saturday, 5 April, 2025

ধর্ষণে প্ররোচনা দিলে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন মহিলাও

রায় মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের

প্রতীকী চিত্র

কোনও মহিলার বিরুদ্ধে যদি ধর্ষণে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এবং সেই অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে, সেই অভিযুক্ত মহিলাও ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হবে। ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত না হলেও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন। একটি মামলায় এমনই মন্তব্য করেছে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এক মহিলা। তাঁর বিরুদ্ধে যে ধারা আনা হয়েছে, তাও আদালত বদলে দিয়েছে। মহিলাকে ধর্ষণে প্ররোচনা এবং সহায়তায় অভিযুক্ত করেছে আদালত।

মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট জানিয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী যদি কেউ কোনও অপরাধে প্ররোচনা দেয় বা উতসাহিত করে তাহলে আইনের চোখে সেও অপরাধী। ২০২২ সালের ২১ আগস্টের এক মামলার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি প্রমোদ আগরওয়াল এবং বিচারপতি প্রশান্ত গুপ্তার। এই মামলায় প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন তরুণী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছিল পুলিশ। তরুণী জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিকবার জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। কখনও এই ঘটনা ঘটেছে অভিযুক্তের বাড়িতে, কখনও হোটেলে। আর এই কাজে অভিযুক্তের মা এবং ভাই তাঁকে সহায়তা করেছেন বলে পুলিশকে জানান তরুণী।

মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের জবলপুর শাখায় এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি প্রমোদকুমার আগরওয়ালের পর্যবেক্ষণ, ‘মহিলারা ধর্ষণ করতে পারেন না। তবে এটা স্পষ্ট যে, তাঁরা ধর্ষণে প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত হতে পারেন। প্ররোচনা ধর্ষণের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এবং স্বতন্ত্র একটি অপরাধ। যদি প্ররোচনার কারণে ওই কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে, তবে মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও ব্যক্তিকে এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে এবং শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’

সরকার পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, অভিযুক্তের মা এবং ভাই তাঁর সঙ্গে জোর করে তরুণীকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ঘরটি বন্ধ করে দিতেন। তাঁরা বলতেন, বিয়ের আগে প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এখন স্বাভাবিক বিষয়। তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হত তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিক, তাঁর মা এবং ভাই- তিন জনের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়।

নির্যাতিতাও তাঁর বয়ানে জানিয়েছিলেন, অভিযুক্ত তাঁর প্রতিবেশী। তিনি তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ধর্ষণের পর বিয়ের প্রস্তাবও খারিজ করে দেওয়া হয় বলে নির্যাতিতা জানিয়েছিলেন।  

তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখে নিম্ন আদালত জানিয়েছিল, অভিযুক্তের মায়ের প্ররোচনাতেই এই ঘটনা ঘটে। এর পরই আদালত ওই অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত করে। ধর্ষণ-সহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ধারাতেই তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছিল। তা চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তেরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

তাঁদের আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্তের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অর্থাৎ, তাঁদের সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। অভিযুক্ত হিসাবে যুবকের মা এবং ভাইয়ের নাম পরে যোগ করা হয় বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু বিচারপতি এই দাবি নস্যাৎ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে প্ররোচনার ধারা বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ধারাগুলি অপরিবর্তিত রাখা হয়।