জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) অসাংবিধানিক ও সমমর্যাদার মৌলিক অধিকার বিরােধী এই মর্মে এক মামলার বিষয়ে কেন্দ্রকে জবাবদিহি করার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি নবীকরণ করার বিষয়েই তা অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার খর্বকারী বলে মামলা করা হয়েছে।
২০২০ এপ্রিল থেকে এনপিআর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। সংবিধানের নাগরিক রুলসের রুল ৪ অধীনে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির জন্য এনপিআর তথ্য সংগ্রহের সংস্থান রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি এ বােবড়েকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ২০ নাগরিকের পক্ষে ইসরারুল হক মন্ডলের দাখিল করা আবেদনের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই নােটিশ পাঠিয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় বিভেদের কারণে শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এমন মুসলিম ব্যতীত অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য সংশােধিত নাগরিক আইন প্রয়ােগের বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন মামলাকারীরা।
আবেদনে জানানাে হয়েছে আইনের সংস্থান অনুযায়ী ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সংবিধানের মৌলিকতা বিরােধী। সংশ্লিষ্ট সিএ প্রয়ােগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দায়ের করা ৬০ টির বেশি মামলা ২২ জানুয়ারি শুনানি হবে।
সংখ্যালঘু সংগঠনের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির ভাষণ উল্লেখ করে এক আবেদন দাখিল করে জানিয়েছে, এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখনই কোনও নির্দেশ জারি করছে না। তাহলে এনপিআর তৈরির উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে? আর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বয়ান ২৪.১২.২০১৯ তারিখে সংবাদ মাধ্যমগুলি প্রচার করেছে।
ফলে যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সরকারি সিদ্ধান্ত যদি এনআরসি নিয়ে কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয় তাহলে সময়, অর্থ, উদ্যোগ ইত্যাদি এনপিআর তৈরি করতে অপচয়ের কোনও মানেই হয় না বলে আবেদনে জানানাে হয়েছে।
সংখ্যালঘু ফ্রন্টের পক্ষে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন উল্লেখ করে জানানাে হয়েছে। এনপিআর তৈরিতে ৩৯৪১.৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং ২০২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজটি চলবে। ফলে এই অপচয় বন্ধ করা জরুরি।
এর বিপরীতে দিল্লিতে এনপিআর বিরােধী সভায় পশ্চিমবঙ্গ ব্যতীত সকল বিরােধী রাজ্যই হাজির ছিল। বাংলার মতাে কেরলেও এনপিআর স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু মুখে বিরােধিতা করলেও শুক্রবার দিল্লিতে এনপিআর নিয়ে বৈঠকে হাজির ছিল কেরলের সরকারি শাসক দলের প্রতিনিধি। সেখানে অন্যান্য কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের সঙ্গে কেরলও এনপিআর তৈরির ব্যাপারে অনুমতি দেওয়ার পক্ষপাতি।
বিরােধীরা এনআরসি ও সিএএ’র মতাে এনপিআরের বিরুদ্ধেও সােচ্চার হয়েছিল। তাদের বক্তব্য ছিল এনপিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য নাগরিকপঞ্জি তৈরিতে কাজে লাগানাে হবে। কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে এনপিআর’এর কাজ স্থগিত রাখা হয়। বুধবার নতুন করে এনপিআর চালু করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমস্ত রাজ্য। তার মধ্যে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও রয়েছে। কিন্তু অনঢ় থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরল।
ওই দিনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘােষণা করেন দিল্লিতে এনপিআর বৈঠকে যােগ না দেওয়ার কথা। সেই মতাে দিল্লিতে এনপিআর বৈঠকে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা দিল্লি যাওয়ায় নতুন করে জল্পনা শুরু হয়। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম অভিযােগ করেন, চুপিসারে এনপিআর বৈঠকে যােগ দিতে যাচ্ছেন রাজ্যের একাধিক আমলা। কিন্তু সেলিমের অভিযােগের সারবত্তা নস্যাৎ করে বামশাসিত কেরলের প্রতিনিধি বৈঠকে যােগ দিয়েছেন। একথা যদিও কেরলের মুখ্যসচিব কে আর জ্যোতিলাল আগেই জানিয়েছিলেন।
কিন্তু বিরােধিতা করেও এনপিআর বৈঠকে কেন অ-বিজেপি সরকারগুলি হাজির হল তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিরােধীদের যুক্তি হল এনআরসি অসমের জন্য। এনপিআর একটি শুরু হওয়া প্রক্রিয়া। দশ বছর অন্তর অন্তর হওয়ার কথা। ইউপিএ জমানায় ২০১০ সালে এই প্রক্রিয়া চালু হয়। পরে তা সংশােধন করা হয় ২০১৫ সালে। এনপিআরের বিরােধিতা করছে না কোনও রাজ্যই। এনপিআর তথ্য নিয়ে তৈরি হবে পঞ্জি। সেটাই ব্যবহার করে এনসিআর তৈরি করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। তবে সুপ্রিম কোর্টে সরকারি বয়ানেই এর সত্যাসত্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে বলে বিরােধীদের আশা।