কেন আজীবন চিরকুমার থেকে গেলেন রতন টাটা?

সদ্য প্রয়াত হয়েছেন টাটা পরিবারের সফলতম বংশধর রতন টাটা। তাঁর সময়ে ব্যবসায়ে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে টাটা গ্রুপ। পারিবারিক ব্যবসা দেখা শুনার পাশাপাশি তিনি অন্তর থেকে ছিলেন একজন প্রকৃত সমাজসেবী, দেশপ্রেমিক ও বিশ্বপ্রেমিক। আজীবন অকৃতদার এই মহান মানুষটার জীবনেও একবার প্রেম এসেছিল। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে এক করুণ ছায়া। ফলে সফল হয়নি সেই প্রেম। বিপুল অর্থ ঐশ্বর্য থাকা সত্ত্বেও এরপর তিনি তাঁর হৃদয়ে আর দ্বিতীয় কোনও নারীর স্থান দেননি। সারাজীবন অবিবাহিত থেকে গেলেন তিনি। কিন্তু কৌতূহল গোটা বিশ্বজুড়ে। কী এমন হয়েছিল তাঁর জীবনে, যার জন্য তিনি সারাজীবন অবিবাহিত থেকে গেলেন?

উল্লেখ্য, ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে জন্ম হয় রতন টাটার। ফেসবুক অব বম্বেতে তাঁর জীবনের অনেক অজানা গল্প বলেছেন রতন টাটা। সেখানেই তিনি বলেছেন, তাঁর মা-বাবার বিচ্ছেদের পর দিদার স্নেহে বড় হয়ে ওঠা, তাঁর শিক্ষা জীবনে দাদি(ঠাকুমা) ভূমিকা, যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা, এবং সেই সময়ে প্রেমে পড়ে যাওয়া।

ফেসবুক অব বম্বের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, বাবা নাভাল টাটার চরম আপত্তি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়তে যান যুবক রতন টাটা। কারণ, তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে যুক্তরাজ্যে প্রকৌশলী বিদ্যা নিয়ে পড়শোনা করুক। অবশেষে দাদি নাভাজবাই টাটার সমর্থনে তিনি আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পান। সেখানে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে স্নাতক ডিগ্রিও অর্জন করেন। এরপর বাবার সঙ্গে শুরু হয় বিরোধ। বাবার কোনও সহযোগিতা না মেলায় তাঁর পৈতৃক ব্যবসায় যোগ দেওয়া হল না। বাধ্য হয়ে তিনি লস অ্যাঞ্জেলসে চাকরি নেন।


এভাবে সেখানে দুই বছর চাকরি জীবন কেটে যায়। সেই সেসময়ে এই লস অ্যাঞ্জেলসেই এক নারীর প্রেমে পড়েন। এবিষয়ে রতন টাটা তাঁর স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, ‘সে সময়টা খুব ভালো ছিল। আবহাওয়া ছিল সুন্দর। আমার নিজের একটি গাড়ি ছিল। চাকরিটা করতেও খুব ভালো লাগত।’ ফলে চাকরির সঙ্গে সঙ্গে প্রেম। সেই সময়টা তাঁর জীবন খুবই মধুর ছিল। লস অ্যাঞ্জেলসের মনোরম প্রকৃতির মধ্যে রতন টাটার রোমান্টিক জীবনের প্রেমের গাড়িটাও গড়িয়ে চলেছিল। চাকরির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের প্রেম পর্ব এভাবেই এগোতে থাকে। বিয়ের কথাও প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সুখ যেন বেশিদিন সহ্য হল না নিয়তির। অকস্মাৎ দুর্দিনের কালো মেঘ ঘনিয়ে দুজনের জীবনে।

আচমকা খবর এলো, তাঁদের প্রিয় দাদি(ঠাকুমা) খুবই অসুস্থ। যার জন্য তাঁকে দ্রুত ভারতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সেসময় তিনি চেয়েছিলেন, ফেরার সময় তাঁর প্রেমিকাকে বিয়ে করে ভারতে নিয়ে যেতে। প্রেমিকাও রাজি। কিন্তু বাদ সাধলেন প্রেমিকার বাবা-মা। কারণ সে সময়ই ইন্দো-চীন যুদ্ধ চলছিল। যার জেরে দেশজুড়ে এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশ্বজুড়ে সেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধ সাগর পাড়ের মানুষের মনেও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রে অনেকের মনে ধারণা হয়েছিল, ভারত এখন নিরাপদ নয়। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁদের মেয়েকে পাঠাতে রাজি ছিলেন না।

যদিও তাঁর প্রেমিকা কথা দিয়েছিলেন, ইন্দো-চীন যুদ্ধ শেষ হলে ভারতে এসে রতন টাটাকেই বিয়ে করবেন। অগত্যা কোনও উপায় না দেখে টাটাকে একাই দেশে ফিরতে হয়েছিল। তবে ফেরার সময় ওই মহিলাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি বিয়ে করলে তাঁকেই বিয়ে করবেন। পরে দেশে ফিরে তিনি জানতে পারেন, মেয়েটির বাবা-মা তাঁকে অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন। এই খবর শোনার পর রতন টাটা মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েন। এভাবে রতন টাটার সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলেও তিনি আর বিয়ে করেন নি।