ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনারা আসলে কবে ঢোকে, মােদিকে প্রশ্ন সােনিয়ার

সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। (Photo: Twitter | @PIB_India)

লাদাখে চিনের আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠক হয়। এই বৈঠকে যোগ দেন সোনিয়া গান্ধি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ার, সীতারাম ইয়েচুরি, নীতীশ কুমার, উদ্ধব ঠাকরে, কে সি আর, মায়াবতী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রমুখ। যদিও এদিনের সর্বদলীয় বৈঠকে ডাক পাননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল, আসাউদ্দিন ওয়াইসি, আরজেডিও।

এদিন বৈঠকের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি। চিনা বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লাদাখের গালোয়ান উপত্যকায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের শহিদ হওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তোলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সোনিয়া গান্ধি সাফ জানতে চান, কবে থেকে চিনা সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকতে শুরু করে? আগ্রাসনের কথাই বা সরকার কবে জানতে পারে? সরকার কি ভারতীয় সীমান্তের উপগ্রহ চিত্র আগে পায়নি? এলএসি’তে চিনা সেনার সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে কি কোনও গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিল না? সরকারকে কি আগাম সতর্ক করা হয়নি? এক্ষেত্রে কি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ব্যর্থ? লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতিই বা কি? একাধিক প্রশ্নবান এদিন সোনিয়া গান্ধি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে।

যেসব প্রশ্ন তিনি রেখেছেন ঠিক একই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেশবাসী জানতে চায় বলে সোনিয়া এদিন বৈঠকে বলেন। সেই সঙ্গে চিনের সঙ্গে মোকাবিলায় যে মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর গঠন করা হয়েছিল তারই বা বর্তমান অবস্থা কি? চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে লাদাখে কি ঘটছে তাও তিনি বিরোধীদের যাতে অবগত করা হয় সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত বিরোধীদের ব্রিফ করার কথাও এদিন সোনিয়া গান্ধি বৈঠকে তোলেন।


সেই সঙ্গে কংগ্রেস সভানেত্রী আরও জানান, এধরনের বৈঠক আরও আগে ডাকা উচিত ছিল। কবে চিনা বাহিনী লাদাখে আমাদের এলাকায় অপুপ্রবেশ করেছিল, ৫’ই মে নাকি তার আগে? যখন বিভিন্ন রিপোর্টে লাদাখে চিনা সেনার সন্দেহভাজন গতিবিধি সামনে আসতে শুরু করে তখনই এই বৈঠক ডাকা উচিত ছিল।

অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্তরে চিনের নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। সেকারণেই ২০ জন জওয়ান শহিদ হলেন। এটা কাম্য ছিল না। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কংগ্রেস ও সব বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে আছে। দেশের যেকোনও রকম আত্মত্যাগে কংগ্রেস প্রস্তুত রয়েছে। তবে, সরকারেরও উচিত সারা বিশ্বের কাছে ঐক্যবদ্ধ ভারতের ছবি তুলে ধরা। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম দায়িত্ব। সেকারণে দেশবাসী ও বিরোধীদের সবকিছু অবগত করা কেন্দ্রের উচিত।

চিনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক, সেই সঙ্গে সামরিক পদক্ষেপ কিভাবে করা যায়, সেই বিষয়ে ঐক্যমতে পৌছনোর জন্য সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিনের বৈঠকে একটি প্রশ্ন বার বার উঠেছে, ভারতীয় বাহিনী নিরস্ত্রভাবে সীমান্তে গিয়েছিল কিনা? যদি নিরস্ত্রভাবে না গিয়ে থাকে, তাহলে আক্রান্ত হয়েও বাহিনী গুলি চালালো না কেন? এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে কংগ্রেস সহ বেশ কয়েকটি দলের তরফে।

তবে কংগ্রেসের শরিক দল এনসিপি প্রধান তথা দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শরদ পাওয়ার অবশ্য বলেছেন, বাহিনী অস্ত্র নিয়ে যাবে কিনা তা নির্ভর করে আন্তর্জাতিক চুক্তির ওপর। সেই চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয় বলে পাওয়ার এদিন মন্তব্য করেন।

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর নীতির প্রশংসা করেছে। আত্মনির্ভর ভারত গড়ার আহ্বানই চিনের ক্রোধ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। অতীতে যখনই জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কোনও প্রশ্ন উঠেছে, তখনই প্রধানমন্ত্রী বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বাংলাদেশ ও মায়ানমার ওপর চিনের বর্তমান প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সিপিআই নেতা ডি রাজা এদিন অবশ্য সরকারকে সতর্ক করেছেন। চিনের সঙ্গে লড়তে গিয়ে যেন আমেরিকার জোটে যোগ না দেয় ভারত, এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জোর দিয়েছেন পঞ্চশীল নীতির ওপর। ওই নীতির ভিত্তিতেই চিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর জোর দিয়ে এসেছে অতীতের বিভিন্ন সরকার। সেই ট্র্যাডিশনই বজায় রাখার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন ইয়েচুরি।