লােকসভায় রাষ্ট্রপতি ভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক প্রস্তাব নিয়ে আলােচনার জবাবি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি আজ ৩৭০ ধারা, তিন তালাক, রামজন্মভূমি, বােড়াে চুক্তি ও ভারত-বাংলাদেশ জমি চুক্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলিকে তাঁর সরকারের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন। তাঁর সরকার ভারতের সংবিধানকে ধ্বংস করছে বলে বিরােধিরা যে অভিযােগ করেছে তার জবাব দিতে গিয়ে মােদি বলেন, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি যখন জরুরি অবস্থা চাপিয়ে দিয়েছিলেন, তখন কংগ্রেসিদের সংবিধান রক্ষা করা উচিত ছিল।
সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পণ্ডিত নেহরু নিজেই পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার পক্ষপাতী ছিলেন। আমি কংগ্রেসকে জিজ্ঞাসা করতে চাই পণ্ডিত নেহরু কি সাম্প্রদায়িক ছিলেন? তিনি কি হিন্দু রাষ্ট্র চেয়েছিলেন? ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার জন্য ১৯৫০ সালে নেহরু-লিয়াকত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু কমার উল্লেখ ছিল। পণ্ডিত নেহরু এত বড় চিন্তাবিদ ছিলেন, তাহলে তিনি সংখ্যালঘুদের পরিবর্তে সমস্ত নাগরিকের কথা চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করলেন না কেন? নেহরুজি যা বলেছিলেন, আমরা আজ তাই বলছি। কাউকে প্রধানমন্ত্রী হতে হবে, তাই ভারতের ওপর একটা রেখা টানা হল, দেশটা ভাগ হয়ে গেল। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভারতের কোনও নাগরিকের ওপরই সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রভাব পড়বে না, তা তিনি যে ধর্ম বিশ্বাসের অনুসারীই হােন না কেন’।
৩৭০ ধারা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলেছিলেন, ৩৭০ ধারা রদ করা হলে কাশ্মীরে আগুন জ্বলবে। ৫ আগস্ট মেহবুবা মুফতি বলেছিলেন, ভারত কাশ্মীরের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ১৯৪৭ সালে আমরা অন্যরকম সিদ্ধান্ত নিলে ভালো করতাম। ওমর আবদুল্লা বলেছিলেন, ৩৭০ ধারা তুলে দিলে কাশ্মীর ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ফারুক আবদুল্লা বলেছিলেন, ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া হলে কাশ্মীরে কেউ জাতীয় পতাকা তুলবে না। আমরা কি করে ওদের পাশে থাকব?’
কাশ্মীরের তিন নেতার বক্তব্য উদ্ধৃত করে মােদি বলেন, ‘যারা সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার কথা বলছে, তারা এত দশক ধরে জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধানকে রূপায়িত করেনি। কারা কাশ্মীরকে শুধুমাত্র জমি দখলের ক্ষেত্র করে তুলেছে? কারা শুধু বােমা ও বন্দুককে কাশ্মীরের পরিচয় করে তুলেছে? কাশ্মীর ভারতের মুকুট। কিন্তু ১৯৯০-এর ১৯ জানুয়ারি অভিশপ্ত রাতে তার পরিচয়’কে কবর দেওয়া হয়েছিল। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীরা যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তা মানা যায় না। এইসব নেতারা কাশ্মীরের জনগণকে বিশ্বাস করেন না। তাই তারা এই ধরেনর কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা কাশ্মীরিদের বিশ্বাস করি, তাই আমরা ৩৭০ ধারা রদ করেছি’।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিরােধী দলগুলির সঙ্গে যুক্ত কিছু রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের দিকে সারা ভারত নজর রাখছে। সংবিধানের মর্যাদা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারা জরুরি অবস্থা জারি করেছিল? কারা বিচার বিভাগকে পদদলিত করেছিল? কারা সংবিধানের সবচেয়ে বেশি সংশােধন করেছে? কারা সবচেয়ে বেশি ৩৫৬ ধারা জারি করেছে? যারা এসব করেছে তাদের সংবিধান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকা প্রয়ােজন। আমরা সংবিধান বাঁচানাে নিয়ে অনেক অভিযােগ, অনেক কথা শুনছি। আমি মানছি কংগ্রেসের এটা দিনে একশােবার বলা উচিত। এতে তারা অতীতের ভুলগুলি উপলব্ধি করতে পারবে। জরুরি অবস্থার সময় আপনারা কি সংবিধান বাঁচানাের স্লোগানের কথা ভুলে গিয়েছিলেন? বা যখন রাজ্য সরকারগুলিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল? বা যখন মন্ত্রিসভার প্রস্তাবকে ছিড়ে ফেলা হয়েছিল?
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। পরিহাসের বিষয় হল যারা এসব কথা বলছেন, তারা সেই গােষ্ঠীর লােকজনের সঙ্গে ফটো তােলা পছন্দ করেন, যারা চান ভারত টুকরাে টুকরাে হয়ে যাক। ভারতের জনগণ যাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে তারা এখন যা করছেন অকল্পনীয়। তারা নাগরিকদের তাদের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে দেখে। কিন্তু আমরা আলাদা। আমরা প্রত্যেককে ভারতীয় হিসেবেই দেখি’।