আজ, শনিবার জেল থেকে ছাড়া পেলেন ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ সিনেমার অভিনেতা অল্লু অর্জুন। গতকাল শুক্রবার জামিন পেয়েছেন তিনি। ছবির প্রিমিয়ারে পদপিষ্ট হয়ে এক মহিলা দর্শকের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ছাড়া পাওয়ার পরেই অভিনেতা এই ঘটনাকে দুঃখজনক বলে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে এতটা ভালোবাসা ও সমর্থন জানানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার সমস্ত অনুরাগীদেরও ধন্যবাদ। দেশের আইনকে শ্রদ্ধা জানাই, আমি ঠিক আছি। চিন্তার কোনও কারণ নেই। তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করব। মৃতার পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রয়েছে। যা ঘটেছিল তার জন্য আমরা দুঃখিত। সেটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমি ওই মৃতার পরিবারের পাশে সবসময়ে আছি, সবরকম সাহায্য করব।’
পরে বাড়ি ফিরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অল্লু অর্জুন বলেন, ‘মৃতার পরিবারের প্রতি সমবেদনা রয়েছে। আমরা খুবই দুঃখিত। তাঁরা যেভাবে চাইবে আমি সেইভাবেই সাহায্য করব। আমি সেদিন প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিনেমা দেখছিলাম। দুর্ঘটনাটি ঘটে হলের বাইরে। আমার সঙ্গে কোনওভাবেই এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক নেই। ওই প্রেক্ষাগৃহে বিগত ২০ বছর ধরে আমি যাই। কোনওদিন এইধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর থেকে বেশি কিছু আমি বলব না কারণ মামলাটি এখনও বিচরাধীন।’
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী এ রেবন্ত রেড্ডি বলেছেন, থিয়েটারে শান্তিপূর্ণভাবে সিনেমা দেখার পরিবর্তে আল্লু অর্জুন একটি হুড খোলা গাড়িতে এসে তাঁর ভক্তদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। সেজন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। যার ফলে পদদলিত হয়ে একজন মহিলার মৃত্যু হয়েছে এবং তাঁর নয় বছরের ছেলে এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী সিনে অভিনেতার বিরুদ্ধে কোনও ক্ষোভ পোষণ করেন না। এটিকে তিনি “বিভ্রান্তিকর প্রচার” বলে অভিহিত করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে আল্লু অর্জুনের বক্তব্যে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। অনুরোধ অনুযায়ী, সিনেমাটির বিশেষ শো চালানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার এবং টিকিটের মূল্যও বাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “জেল ম্যানুয়ালের নির্দেশিকা অনুযায়ী, নির্দেশ করে যে একজন ব্যক্তিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে সূর্যাস্তের আগে। তাই সূর্যাস্তের পরে কারাগারের কর্মকর্তাদের দ্বারা জামিনের আদেশ সূর্যোদয়ের পরেই কার্যকর করা হয়।” সেজন্য সূর্যাস্তের পর অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আদেশ আসায় রাত কাটাতে বাধ্য হন অভিনেতা।
গত ৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের সন্ধ্যা থিয়েটারে রেবতী নামে এক মহিলার পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই সঙ্গে তাঁর শিশুপুত্রও গুরুতর জখম হয়। সে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। জানা গিয়েছে, রেবতী ঘটনার সময় ওই সিনেমা হলের নিচের ব্যালকনিতে বসেছিলেন। সেই সময় হলে অল্লু অর্জুন হলে প্রবেশ করলে দর্শকদের প্রচন্ড হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ধাক্কা লেগে পড়ে যান রেবতী ও তাঁর শিশুপুত্র। সেই মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয় অল্লু অর্জুনকে। এজন্য শুক্রবার তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে চিক্কাড়পল্লি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতে তোলা হলে নিম্ন আদালত তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। এদিকে জনপ্রিয় এই অভিনেতার গ্রেপ্তারি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁর অগণিত ভক্তরা। তেলেঙ্গানার কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিআরএস ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতারা। অবশেষে হাইকোর্টে গেলে তাঁর জামিন মেলে। ৫০ টাকার বন্ডে তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেয় তেলেঙ্গানা হাইকোর্ট। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত তাঁকে জেলেই কাটাতে হয়। কারণ, রাতে হাইকোর্টের নির্দেশ জেলে এসে পৌঁছয়নি। শনিবার সকালে জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। জেলে থেকে ছাড়া পেয়ে হায়দরাবাদের জুবিলি হিলসের অফিসে চলে আসেন অল্লু অর্জুন। সেখান থেকেই সাংবাদিকদের সামনে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন। প্রসঙ্গত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার আগেই মৃতার পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করেন অভিনেতা।
যদিও শুক্রবার মহিলার স্বামী ভাস্কর মাগুদামপল্লি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পিছনে অভিনেতা অল্লু অর্জুনের কোনও হাত ছিল না। আমার ছেলে ছবিটি দেখতে চেয়েছিল, তাই গিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে অল্লুর গ্রেপ্তারির কথা জানায়নি।’
উল্লেখ্য, ছেলের অনুরোধে গত ৪ ডিসেম্বর হায়দরাবাদের ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবির প্রিমিয়ারে যান ভাস্কর মাগুদামপল্লি। সন্ধ্যা থিয়েটারের সেই প্রিমিয়ারে ভাস্করের সঙ্গে তাঁর ছেলে ছাড়াও ছিলেন তাঁর স্ত্রী রেবতী (৩৯) ও আট বছরের মেয়ে। তাঁরা প্রেক্ষাগৃহে ঢোকেন রাত ন’টা বেজে ১০ মিনিট নাগাদ। আধঘণ্টা পর আচমকা প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করেন ছবির অভিনেতা অল্লু অর্জুন। তাঁকে দেখতে হলে প্রচন্ড হুড়োহুড়ি শুরু হলেও ভিড় নিয়ন্ত্রণে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ওঠে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। দর্শকদের ঠেলাঠেলিতে ছেলেকে নিয়ে নিচে পড়ে যান রেবতী দেবী। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। হাসপাতালেই রেবতীর মৃত্যু হয়। এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটি। এই ঘটনায় রেবতীর স্বামী ভাস্কর মাগুদামপল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অনিচ্ছাকৃত খুন সহ একাধিক ধারায় অল্লু ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। নিজের অজান্তেই পুলিশের দায়ের করা অভিযোগপত্রে সই করেন ভাস্কর মাগুদামপল্লি। সেই অভিযোগে অল্লুর টিম সহ সন্ধ্যা থিয়েটার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়।