ভারতের বায়ুসেনা পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দেওয়ার সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মুখে শান্তি ও সৌজন্য প্রকাশের কথা বলেছিলেন। পুলওয়ামা বালাকোট পরবর্তী পরিস্থিতিতে ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তান কি সত্যিই শান্তির বার্তা পাঠিয়েছিল? নাকি এর পেছনে ছিল অন্য কোনও কারণ?
অভিনন্দনকে ছাড়ার জন্য পাকিস্তানের ওপর যে আন্তর্জাতিক চাপ প্রবলতর হচ্ছিল, তাও কারও অজানা নয়। কিন্তু সেই আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করেই কি ইসলামাবাদ তড়িঘড়ি ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটকে মুক্তি দিয়েছিল? নাকি আরও কোনও ভয় বা বৃহত্তর স্বার্থ কাজ করেছিল পাকিস্তানের মনে। যার জন্য বিষয়টি নিয়ে আর জলঘােলা করতে চায়নি পাকিস্তান?
পাকিস্তানের এক সাংসদ বুধবার পার্লামেন্টে দাবি করেন, ভারতের হামলার ভয়েই ইমরান খান সরকার তড়িঘড়ি অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছিল। বালাকোট হামলার পরপরই ভারত ও পাকিস্তানের পাইলটদের মধ্যে লড়াইয়ের সময় অভিনন্দনের বিমান ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের মাটিতে।
জাতীয় সংসদে এক ভাষণে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা আয়াজ সাদিক বলেন, অভিনন্দন বন্দি হওয়ার পর পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বলেছিলেন- অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি না দিলে ভারত পাকিস্তানের ওপর হামলা করবে। এও বলা হয়েছিল, ওই দিন রাত ন’টার মধ্যে ভারত প্রত্যাঘাত করবে। পিএমএল (এন) নেতা সাদিককে উদ্ধৃত করে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বিরােধী নেতাদের উদ্দেশ্যে সাদিক বলেন, পিপিপি ও পিএমএল (এন)-র নেতারা ছাড়াও সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার উপস্থিতিতেই বৈঠক করেন শাহ মেহমুদ কুরেশি। পাক বিদেশমন্ত্রী বৈঠকে বলেছিলেন, অভিনন্দনকে মুক্তি দিতে হবে।
সাদিকের কথায়, ‘আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে, কুরেশির ওই বৈঠকে ইমরান থাকতে অস্বীকার করেছিলেন। বৈঠকে এসেছিলেন পাক সেনাপ্রধান। তিনি তখন সেখানে দরদর করে ঘামছিলেন। বিদেশমন্ত্রী বৈঠকে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আল্লার দোহাই, অভিনন্দনকে যেতে দিন। নাহলে রাত ন’টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের ওপর হামলা চালাবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি হামলা রুখতে গিয়ে পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। তাঁর ঠিক ১২ দিন আগে পুলওয়ামার জঙ্গি হামলায় সিআরপিএফ-র ৪০ জন সেনা শহিদ হন। পাকিস্তানকে জবাব দিতে ভােররাতে অন্ধকারে বালাকোটে পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে এয়ার স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা।
তার পরের দিন পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানকে ধাওয়া করতে গিয়ে বিমান ভেঙে ধরা পড়েছিলেন অভিনন্দন। তিনদিন তাকে হেফাজতে রেখেছিল পাকিস্তান। পরে শান্তি ও সৌজন্যের বার্তার কথা উল্লেখ করে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল পাকিস্তান।