ভােটের আগে তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করে, বারগেন করে কোনও লাভ হবে না। আমাদের ‘অধিকারী-চ্যাটার্জি’ সবাইকে নিয়েই সংসার। নাম না করলেও মেদিনীপুরের সভা এই হুঁশিয়ারি যে শুভেন্দু অধিকারীকে লক্ষ্য করেই সেকথা মনে করছেন তৃণমূলের নেতারা।
এদিন বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে আরও একবার ‘অধিকারী’ শব্দটি প্রয়ােগ করতে দেখা যায় নেত্রীকে। মমতা এদিন বলেন, সর্ব ধর্ম বর্ণের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করে চলছে রাজ্য সরকার। এমনি একটা সরকার দেখান যারা সংখ্যালঘু, তফশিলি জাতি উপজাতি বাউড়ি, বাগদি, মুণ্ডা, হেমব্রম, অধিকারী, ব্যানার্জি, দাস, কর্মকার, রাম , রহিম সকলে একসঙ্গে বাস করছে।
সােমবার মেদিনীপুরের সভাতে শুভেন্দুর নাম না করে বক্তৃতার মধ্যে দু’বার অধিকারী শব্দটি প্রয়ােগ করা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। মেদিনীপুরের মাঠে বক্তৃতার সময় শুভেন্দু’র নাম না করে দু’বার ‘অধিকারী’ শব্দটি প্রয়ােগ করা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের মমতা ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে শুভেন্দু অধিকারীকে একসময় যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হলদিয়া উন্নয়ন পরিষদ, হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দলের মধ্যে বিভিন্ন সম্মানীয় পদ, মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট থাকেননি তিনি। শুধু শুভেন্দুই নয়, তার বাবা শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারীও সাংসদ পদে রয়েছেন। কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন সৌমেন্দু অধিকারী।
প্রসঙ্গত সােমবার মেদিনীপুরের জনসভা তৃণমূলের দলীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন নজির হয়ে থাকল। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরে জনসভা করলেন, অথচ ‘অধিকারী’ পরিবারের তৃণমূল নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকলেন না। শুধু তাই নয়, সােমবার যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরে সভা করছেন, সেই সময় শুভেন্দু কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কিন্তু কেন তিনি কলকাতায় ফিরলেন, তার কারণ জানা যায়নি। তবে তিনি প্রকাশ্যে দল বা সরকারের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।
কৌশলগত কারণে তবে ক’দিন আগেই শুভেন্দু অধিকারী দলকে জানিয়েছিলেন একসঙ্গে কাজ করা আর সম্ভব নয়। তার পরে সােমবারের জনসভায় অধিকারী পরিবারের অনুপস্থিতি দেখে বিরােধীরা মনে করছে তৃণমূল দল ভাঙছে।
তবে এইসব জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সতর্কবার্তা দিয়ে চাঙ্গা করতে চাইলেন দলকে। সােমবার তিনি বললেন, কেউ যদি মন করে তৃণমূলকে ব্ল্যাকমেল করব, ভােটের সময় তৃণমূল কংগ্রেসকে দুর্বল করে দেব, তাহলে সেই বিজেপি ও তাদের যারা বন্ধু, তাদের বলব, আগুন নিয়ে খেলবেন না।
তিনি আরও বলেন, বিজেপি ক্রাটা ফ্যাশন হয়ে যাচ্ছে। যাঁদের টাকা হয়েছে, টাকা বাঁচাতে বিজেপি করছে। লুটেরাদের আশ্রয় দিচ্ছে বিজেপি। মমতার কথায় তৃণমূল কংগ্রেস যখন ছােট ছিল, তখন অনেকে বলতেন ছাগলে মুড়িয়ে খাবে। তৃণমূল এখনি মহীরুহ, তাদের মারা যাবেনা। এদিন মেদিনীপুরের জনসভায় ছাত্র যুবদের শপথ নিতে বলেন মমতা। ২০২১ সালে বাংলা জয়ের শপথ। লাঠি গুলি খেয়েও তৃণমূল কংগ্রেস না ছাড়ার শপথ।
বস্তুত সােমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা বিধানসভা ভােটের আগে ঘর গােছানাের বদলে ঘরভাঙা সামলানাের সভা হয়ে দাঁড়িয়েছিল শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। দল ভাঙলেও যাতে দলীয় কর্মীদের মন না ভাঙে তারই চেষ্টা নেত্রীর।