• facebook
  • twitter
Saturday, 2 November, 2024

১৯০১ সালের পর ভারতে উষ্ণতম অক্টোবর 

মৌসম ভবন জানাচ্ছে, ১৯০১ সালের পর গোটা দেশে চলতি বছরের অক্টোবর মাসই ছিল উষ্ণতম। গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ২৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, নভেম্বর মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গরমের অনুভূতি তুলনামূলক ভাবে বেশিই থাকতে পারে। 

অক্টোবরের শেষ হয়ে নভেম্বর আসতেই শীতের আমেজ জানান দেয়।  ভোরবেলা হালকা শীতের আমেজ অনুভব করা যায়।  ধীরে ধীরে আলমারি থেকে লেপ-কম্বল বের করার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় ।  শীতপ্রেমীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে  কবে আসবে শীত । কিন্তু শীত তো দূরের কথা , এই  বছর উষ্ণতম অক্টোবরের তকমা পেল দিল্লি। শুধু তাই নয়, মৌসম ভবন জানাচ্ছে, ১৯০১ সালের পর গোটা দেশে চলতি বছরের অক্টোবর মাসই ছিল উষ্ণতম। গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ২৬.৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, নভেম্বর মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গরমের অনুভূতি তুলনামূলক ভাবে বেশিই থাকতে পারে। 

অক্টোবর মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল তাপমাত্রা। গত এক শতাব্দীরও বেশি সময়ে অক্টোবর মাসে এতটা গরম পড়েনি ভারতে। এটিই ছিল ভারতের উষ্ণতম অক্টোবর। দেশের গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ১.২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লির এই তাপমাত্রাই বলে দেয় জলবায়ুর পরিবর্তন কিভাবে আবহাওয়া বদলের উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে এর থেকে মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। ফলে জাঁকিয়ে শীতের অপেক্ষায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের হতাশা বাড়তে পারে । মৌসম ভবনের  অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্রের মতে, নভেম্বরকে শীতের মাস হিসাবে দেখছে না মৌসম ভবন। মূলত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিকেই শীতের মাস হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরে হালকা শীতের অনুভূতি মিলতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মৌসম ভবনের অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, ‘পশ্চিমী ঝঞ্ঝার অনুপস্থিতি এবং নজিরবিহীনভাবে পূর্বের বাতাসের উপস্থিতি এই উষ্ণতম অক্টোবরের জন্য দায়ী। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপি থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছে।জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস প্রবেশ করছে।’  নিউট্রাল এল নিনো পরিস্থিতির কারণে শীত আসতে বিলম্ব হবে বলেও জানিয়েছেন মৌসম ভবনের অধিকর্তা। লা নিনা অর্থাৎ শীতের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হতে ডিসেম্বর হয়ে যাবে। এই লা নিনা হিন্দুকুশ পর্বত থেকে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশের পথ সুগম করবে। তখন দেশে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।

দিল্লির সফদরজং আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যানুযায়ী,  ১৯৫১ সালের পর এই প্রথম অক্টোবর মাসে এত গরম পড়ল দিল্লিতে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ৩৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

গত শতকের তাপমাত্রার তথ্য ঘেঁটে দেখা যায় , ১৯৫১ সালে অক্টোবরে দিল্লিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  ১৯০৭ সালে ছিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৩০ এবং ১৯৩৮ সালে অক্টোবর মাসে দিল্লির তাপমাত্রা পৌঁছয় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তারপর এই ২০২৪ সালে উষ্ণতম অক্টোবরের সাক্ষী থাকল দিল্লি।

অক্টোবরে দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ছিল ২১.৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ২০.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৌসম ভবন জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ভারতে তাপমাত্রা কমার জন্য উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাতাস প্রবেশ করা প্রয়োজন যা এখনই হচ্ছে না। ওই অঞ্চল থেকে বর্ষা এখনও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। সেই কারণে তাপমাত্রাও কমছে না।

চলতি বছর সার্বিকভাবে তাপমাত্রার বৃদ্ধি আবহাওয়াবিদদের চিন্তায় ফেলেছে। দিল্লিতে অক্টোবর মাসে তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল বলেই মনে করছেন তাঁরা। শুধুমাত্র নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপনই নয়, এই ‘হাওয়া বদল’ শীতের উপরও প্রভাব ফেলবে চলতি বছর।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী চার দিনে দক্ষিণবঙ্গে, বিশেষত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তাপমাত্রা কমতে পারে উত্তরের জেলাগুলিতেও। সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহে শীতের আমেজ অনুভব করা যেতে পারে । তবে  শীত আসতে এখনও দেরী আছে।