ওয়াকফ বিল: আলোচনার জন্য আরও সময় চেয়ে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি বিরোধী সাংসদদের

-- ফাইল চিত্র

ওয়াকফ বিল নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। একদিকে সরকার পক্ষ এবং অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির সদস্যদের মধ্যে এই টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। জেপিসির শেষ বৈঠক ছিল বৃহস্পতিবার। এবার রিপোর্ট সংসদে পেশ করার পালা। কিন্তু বিরোধী সাংসদরা এখনই খসড়া রিপোর্ট পাশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, এখনও একাধিক বিষয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে। সেজন্য কমিটিকে আরও কিছুটা সময় দেওয়া হোক। কিন্তু যৌথ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এবিষয়ে আশ্বস্ত না করতেই বিরোধী সাংসদরা লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার দ্বারস্থ হতে চলেছেন। আগামী সোমবার সংসদে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুর দিনেই স্পিকারের সঙ্গে এবিষয়ে বৈঠক করতে চাইছেন বিরোধীরা। না হলে খসড়া রিপোর্ট পাশ করানোর প্রক্রিয়ায় তাঁরা অংশগ্রহণ নাও করতে পারেন। এমনটাই হুমকি দিয়েছেন বিরোধী দলগুলির সাংসদরা।

কিন্তু এব্যাপারে বেঁকে বসেছেন যৌথ সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। তিনি বিরোধীদের দাবি মেনে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধিতে কোনও আশ্বাস দেননি। চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, রিপোর্ট প্রস্তুত। সোমবার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হলেই সংসদে রিপোর্ট পেশ করা হবে। এখন শুধুমাত্র সরকারের সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার অপেক্ষা। তবে জগদম্বিকা বলেছেন, ‘তাঁদের অধিকার রয়েছে। মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে লোকসভার স্পিকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

প্রসঙ্গত তৃতীয় মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেই ওয়াকফ সংশোধনী বিল আনে সংসদে। কিন্তু লোকসভার স্পিকার সেই বিল পর্যালোচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। চলতি বছরের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহেই সেই পর্যালোচনা রিপোর্ট পেশ হওয়ার কথা। সেই হিসেব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারই যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসি-র বৈঠক শেষ হয়। এমনই জানিয়েছেন কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেছেন, ‘এটিই কমিটির শেষ বৈঠক। ওয়াকফ বিলের উপর আমাদের রিপোর্ট প্রস্তুত এবং আমাদের চেষ্টা থাকবে সবাই যেন একমত হয় এবং কোনও ভিন্নমতের নোট না দেয়। কমিটি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। পাঁচ দিনে ২৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংশোধনী বিল নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ২৫টি বৈঠক হয়েছে।’


সূত্রের খবর, এদিন বৈঠক শুরু হতেই জগদম্বিকা সদস্যদের জানিয়ে দেন, ওয়াকফ নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির আজই শেষ বৈঠক। তা শোনার পরেই প্রতিবাদ করেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁরা দাবি করেন, একাধিক বিষয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে। তাছাড়া কমিটির সদস্যরা এখনও খসড়া রিপোর্ট পাননি। নিয়ম অনুযায়ী, সেই রিপোর্ট দেখেই বিলের প্রতি তাঁদের সমর্থন বা আপত্তি জানানোর কথা রয়েছে। এরপরই সেই খসড়া রিপোর্টটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে পাশ হওয়ার কথা। যেটা এখনও বাকি রয়েছে। ফলে পুরো পদ্ধতি মেনে কাজটি করতে আরও বাড়তি কিছু সময়ের প্রয়োজন। বিরোধীরা জানিয়েছেন, আলোচনার দিন বাড়ানোই তাঁদের একমাত্র দাবি, যাতে যেসব বিষয়গুলি নিয়ে জটিলতা রয়েছে, সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়। যদি সরকার বাড়তি সময় দিতে অসম্মত হয়, সে ক্ষেত্রে খসড়া রিপোর্টে ব্যক্তিগত ও দলীয় আপত্তির জায়গাগুলি নথিভুক্ত করা হবে।

এদিন প্রায় ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক চলার পরও কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, খসড়া আইনের পরিবর্তন খুঁটিয়ে দেখার জন্য তাঁদের আরও সময় প্রয়োজন। এমনকি জেপিসির চেয়ারম্যান বৈঠকের বাড়তি সময় ও আলোচনার বিষয়ে কোনও আশ্বাস না দেওয়ায় বিরোধী সাংসদরা ক্ষোভ প্রদর্শন ও স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এমনকি বৈঠকের মাঝেই স্পিকার ওম বিড়লাকে ফোন করেন তাঁরা। এ বিষয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

এদিকে সোমবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হলে স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বিরোধী সাংসদরা। ঘটনাচক্রে ওইদিন ওম বিড়লার মেয়ের বিয়ের প্রীতিভোজ। ফলে তিনি ওইদিন এই বৈঠকে কতটা সময় দিতে পারবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।