• facebook
  • twitter
Wednesday, 19 February, 2025

ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ

মানাই হলো না  বিরোধীদের দাবি

প্রতীকী চিত্র

যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) মঞ্জুর করলো ওয়াকফ সংশোধনী বিল। বিরোধী সাংসদদের তুমুল আপত্তি উপেক্ষা করেই সোমবার কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক জোটের প্রস্তাবিত ১৪টি রদবদলেই সবুজ সংকেত দিয়েছে জেপিসি। এই বিলে বিরোধী সাংসদরা ৪৪টি সংশোধনীর দাবি করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের দাবি নাকচ করে দিয়েছে কমিটি। এই বিল পাশ হওয়ার পর একযোগে প্রতিবাদ করে বিরোধী সাংসদরা জানিয়েছেন, সামনেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন, তাই তাড়াহুড়ো করে পাশ করানো হয়েছে ওয়াকফ বিল।

গত বছর ৮ আগস্ট ওয়াকফ বিল পেশ করা হয়। লোকসভায় প্রস্তাবিত বিল পেশের পরেই কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তা পাঠিযে দিয়েছিলেন জেপিসিতে। এই নিয়ে আলোচনার জন্য বিরোধীদের দাবি মেনে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়েছিল সরকার। প্রাথমিকভাবে শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহেই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রিপোর্ট দিতে না পারায় কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিলো বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন পর্যন্ত। তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ওয়াকফ বিলে সবুজ সংকেত দিয়েছে কমিটি।

বিজেপি সংসদ জগদম্বিকা পালের নেতৃত্বধীন এই কমিটি সর্বমোট ৬৭টি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছিলো। যার মধ্যে ২৩টি ছিলো বিজেপির তরফে আর বিরোধী সদস্যদের তরফে ছিলো ৪৪টি সংশোধনী। এই সংশোধনী নিয়ে কমিটিতে গত ৬ মাস ধরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সোমবার ছিলো চূড়ান্ত বৈঠক। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। ভোটাভুটিতে বিরোধী এমপিদের প্রস্তাবগুলি খারিজ হয়ে গিয়েছে।

শুক্রবার এবং শনিবার এই নিয়ে শেষ দফায় জেপিসির বৈঠক ডেকেছিলেন কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল। শুরুতেই তৃণমূলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির সংসদ নিশিকান্ত দুবের বাদানুবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিলো বৈঠক। এরপরই কমিটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করার অভিযোগ তুলে যে লাগাতার বিক্ষোভ দেখতে শুরু করেছিলেন বিরোধীরা। যার জেরে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ মোট ১০ সাংসদকে একদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিলো। সোমবার বৈঠকের আগে অভিযোগ তুলে কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, সোমবার বৈঠক শুরুর ৪১ মিনিট আগে সংশোধনীর তালিকা সংক্রান্ত নথি হাতে পেয়েছেন তিনি।

ফলে তাঁর পক্ষে প্রস্তাবিত সংশোধনী পর্যালোচনা করাই সম্ভব হয়নি। এদিনের বৈঠক শেষে কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পাল জানিয়েছেন, এই এই প্যানেলে ১৬ জন ছিলেন বিজেপি ও শাসক জোটের সদস্য। আর ১০ জন ছিলেন বিরোধী এমপি। বিরোধী প্রস্তাবগুলি নিয়ে ভোটাভুটি হলে তাতে বিজেপি ও শাসক জোটের সদস্য পেয়েছে ১৬টি ভোট আর বিরোধী এমপি-রা পেয়েছে ১০টি ভোট। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনেই এই বিল পাশ করানোর সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সূত্রের খবর, ১৪টি সংশোধনী নিয়ে আগামী ২৯ জানুয়ারি ফের ভোটাভুটি হবে। ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারে কমিটি।

বৈঠক শেষে কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ভোটাভুটিতে ১৬-১০ ব্যবধানে বিলের খসড়া অনুমোদিত হয়েছে। বিলের ধারাগুলি নিয়ে কোনও আলোচনা ছাড়াই হাত তুলে ভোটাভুটি হয়েছে। বিজেপি, জেডিইউ, তেলগু দেশমের মতো দল বিল সমর্থন করেছে। তাদের ১৪টি সংশোধনী গৃহীত হলেও আমাদের একটিও সংশোধনী গ্রহণ করা হয়নি। আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের কালো দিন।’

প্রসঙ্গত, নতুন এই আইনে বলা হয়েছে ওয়াকফ কাউন্সিল যে কোনও জমিতে দাবি জানাতে পারবে না। কমপক্ষে ৫ বছর ইসলাম ধর্ম পালনের পরই ওয়াকফে সম্পত্তি দান করা যাবে। ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য ও অন্তত দুইজন মহিলা সদস্য যোগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিম একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তিনজন সাংসদস দুইজন প্রাক্তন বিচারপতি, উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক সদস্য যোগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

News Hub