নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল তামাম দেশ, গুরুত্বপূর্ণ একাধিক শহরে ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড পরিষেবা সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে- উত্তরপ্রদেশের ইদগী এলাকায় সংঘর্ষের পর রামপুরেও মােবাইলে। ইন্টারনেট পরিষেবা সাসপেন্ড করার নির্দেশ জারি করা হয়।
নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতায় সামিল প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। রামপুরে দুপুরবেলায় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তারক্ষীদের লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছােড়ে। পুলিশও লাঠিচার্জ করে। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে কাঁদানে গ্যাসের সেলও ছোঁড়ে।
চাণক্যপুরীতে উত্তরপ্রদেশ ভবন চত্বরে নিষেধাজ্ঞামূলাক নির্দেশ জারি করা হয়। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ওপর পুলিশি দমন-পীড়নের ঘটনার বিরােধিতায় টানা সাতদিন ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হচ্ছে। দু’একদিন ধরে উত্তরপ্রদেশে সামগ্রিক চিত্রটা বদলে গেছে, বলা ভালাে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শুধু উত্তরপ্রদেশেই ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লির পরিস্থিতিও উত্তেজনাময়, পুরানাে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় দুপুরবেলা ও সন্ধ্যেবেলা সংঘর্ষের ঘটনা হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫ জন গুরুতর জখম হয়। তারা দশজনকে গ্রেফতার করেছে।
উপ্রদেশের শাহরানপুর, দেওবন্দ, শামলি, মুজাফফরগর, মিরাট, গাজিয়াবাদ, হাপুর, সম্বল, আলিগড়, বাহারাইচ, ফিরােজাবাদ, বাদোহি, গােরক্ষপুরে গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের জমায়েতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হলে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ও পি সিং বলেন, ‘একটা ওলিও করা হয়নি’।
এদিকে ছত্তিশগড়ের অর্ধেক মানুষের না আছে কোনও জমি, না আছে কোনও দলিলপত্র৷ তারা নিজেদের ভারতের নাগরিক বলে প্রমাণ করতেই পারবে না। শনিবার এই মন্তব্য করেছেন ছত্তিশগড়ের মুখমাত্র ভূপেশ লাগেল। তার কথায়, এই রাজ্যের অধিকাংশ বাসিন্দার পূর্বপুরুষ ছিলেন নিরক্ষর। আনেকে ভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছেন। অনেকে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে গিয়ে বসতি করছে, তাদের কাছে কোনও নথিপত্র নেই।
মুখ্যমন্ত্রী আগেই বলেছিলেন, এনআরসির বিরােধিতা করবেন তিনি। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘১৯০৬ সালে গান্ধিজিও আফ্রিকায় ব্রিটিশের আইডেন্টিফিকেশন স্কিমের বিরােধিতা করেছিলেন। আমিও সেই পথেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরােধিতা করব’। তিনি বলেন, আমাদের সকলকে প্রমাণ করতে হবে যে আমরা ভারতীয়। যারা প্রমাণ করতে পারবেন না তাদের কী হবে? প্রশ্ন তােলেন তিনি।
ছত্তিশগড়ে ২ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ বসবাস করেন। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশী মানুষ নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না। তাদের না জমি আছে, না জমির রেকর্ড। কীভাবে ৫০-১০০ বছরের পুরানাে নথিপত্র আনবেন? এনআরসির সমালােচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের ওপরে অকারণে বােঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য একাধিক সংস্থা আছে। তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক। কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে কেন?