• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

সন্তাদের ভবিষ্যতে উচ্চমানের চোর-ডাকাত তৈরী করতে লক্ষ-লক্ষ খরচ 

এখানে নচিকেতার বিখ্যাত গান, ‘আমি ভবঘুরে হবে এটাই আমার অ্যাম্বিশন’। যদিও পৃথিবীর যেকোন মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তিনি চান নাকি তার সন্তান ভবঘুরে হোক। এক বাক্যে উত্তর হবে, ‘কখনোই নয়’।সন্তানকে নিয়ে অভিভাবকদের স্বপ্নই হল কেউ ডাক্তার তো কেউ উকিল, কেউ আবার বিজ্ঞানী। তার জন্য নিজের সর্বস্ব দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু তাই বলে চোর-ডাকত! ঠিকই খোদ আমাদের

এখানে নচিকেতার বিখ্যাত গান, ‘আমি ভবঘুরে হবে এটাই আমার অ্যাম্বিশন’। যদিও পৃথিবীর যেকোন মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তিনি চান নাকি তার সন্তান ভবঘুরে হোক। এক বাক্যে উত্তর হবে, ‘কখনোই নয়’।সন্তানকে নিয়ে অভিভাবকদের স্বপ্নই হল কেউ ডাক্তার তো কেউ উকিল, কেউ আবার বিজ্ঞানী। তার জন্য নিজের সর্বস্ব দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু তাই বলে চোর-ডাকত! ঠিকই খোদ আমাদের দেশেই রয়েছে এমন একটি গ্রাম যেখানে বাবা-মা স্বয়ং তার সন্তানকে চোর-ডাকাত তৈরী করতে লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করছেন।

মধ্য প্রদেশের রাজগড় জেলার তিনটি প্রত্যন্ত গ্রাম গুলখেড়ি, কাদিয়া এবং হুলখেড়ির বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের নাম করা চোর-ডাকাত তৈরী করতে মরিয়া। শুধু ওই তিনটি গ্রামই কেন, আশপাশের অনেক গ্রামের বাবা-মায়েরাই তাঁদের সন্তানদের অপরাধী হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান  গ্রামে। ভোপাল থেকে ১১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই তিনটি গ্রামে রীতিমতো স্কুল খুলে শেখানো হচ্ছে চুরি, ছিনতাই এবং ডাকাতি। বাংলা, অঙ্ক, ভূগোলের মতো অপরাধও একটা বিষয় হিসেবে স্কুলে পড়ানো যায়, তা হয়তো কারও কল্পনাতেও আসেনি। কিন্তু, এটা হয়ে চলেছে। আর তা থেকেই এই প্রত্যন্ত তিনটি গ্রাম কুখ্যাত হয়েছে ‘অপরাধের নার্সারি’ হিসাবে। সবকিছু জেনেও কিছু করার উপায় নেই স্থানীয় পুলিশের। বরং এই গ্রামগুলিতে তাঁদেরকেও সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।

জানা গিয়েছে, ১২-১৩ তে পা দিতেই অভিভাবকদের চিন্তা শুরু হয়ে যায় সন্তানের জন্য অপরাধের সেরা গুরু খোঁজার। সন্তানদের অপরাধের প্রশিক্ষণ নিতে এই গ্রামগুলিতে পাঠান তাদের বাবা-মায়েরা। বিভিন্ন গ্যাং লিডারদের সঙ্গে দেখা করে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেন, কে তাঁদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং কে তাদের সেরা শিক্ষা দিতে পারবে। এরপর, সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁদের ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা বেতন দিতে হয়। নাম লেখানো হয়ে গেলে, ওই শিশুদের ভিড়ের মধ্যে ব্যাগ ছিনতাই করা, দ্রুত দৌড়ানো, পকেটমারি করা, পুলিশকে এড়িয়ে যাওয়া, ধরা পড়লে মারধর সহ্য করার মতো বিভিন্ন অপরাধমূলক দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। এভাবে এক বছর কাটার পর, গ্যাং লিডাররা প্রত্যেক শিশুর বাবা-মাকে ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা দেয়।

রাজগড় জেলার এই গ্রামগুলিতে কোনও ধরণের তদন্ত করা প্রায় অসম্ভব। জানা গিয়েছে, এই গ্রামগুলিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩০০-রও বেশি শিশু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানে চুরি করে। এই অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত ২,০০০ জনেরও বেশি মানুষের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে বিভিন্ন থানায় ৮,০০০ টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

বহু দিন ধরেই এই গ্রামগুলিতে এই রীতি চললেও লোক চক্ষুর আড়ালেই ছিল। কিন্তু হঠাৎই হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর ছেলের বিয়েতে জনসমক্ষে চলে আসে এই রেওয়াজের কথা। জানা গিয়েছে, কীভাবে খোঁজ মিলল এই অপরাধের নার্সারি স্কুলের? গত ৮ অগস্ট, জয়পুরের হায়াত হোটেলে হায়দরাবাদের এক ব্যবসায়ীর ছেলের বিয়ে ছিল। সেই জমকালো বিয়েতে একজন নাবালক চোর ১.৫ কোটি টাকার গয়না এবং নগদ ১ লাখ টাকার একটি ব্যাগ চুরি করেছিল। বর ও কনেকে আশীর্বাদ করার সময়, বরের মায়ের কাছে ব্যাগটি ছিল। তার হাত থেকেই ওই ব্যাগটি ছিনতাই করে পালিয়েছিল ওই নাবালক চোর। চুরির পর দলবল নিয়ে সে কাদিয়া গ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল। সন্দেহ এড়াতে, তারা চুরি করা গয়না ফেলে দিয়ে কানওয়ার যাত্রায় মিশে গিয়েছিল। কিন্তু, এত করেও পার পায়নি তারা। ওই নাবালক চোরকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয় এবং তা থেকেই পুরো গ্যাঙের কথা জানা যায়।

মধ্য প্রদেশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জয়দীপ প্রসাদ বলেছেন, “সম্প্রতি, জয়পুরের পুলিশ কমিশনার এই বড় চুরির বিষয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি বিয়েতে প্রায় ১.৫ কোটি টাকার গয়না চুরি হয়েছিল। আমরা জানতে পেরেছি, অপরাধীরা রাজগড়ের। আমরা অবিলম্বে তথ্য সংগ্রহ করেছি এবং অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে সমন্বয় করতে শুরু করেছি।” তিনি আরও জানিয়েছেন, এই অপরাধীদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যে, গয়নার মূল্য নির্ধারণ করতেও তাদের কোনও অলঙ্কারের দোকানে যেতে হয় না, নিজেরাই পারে। গ্যাং লিডাররা প্রাথমিকভবে ওই শিশুদের চুরি, জুয়া খেলা এবং মদ বিক্রির প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের মধ্যে যারা বেশি দক্ষতার পরিচয় দেয়, তাদের আরও বড় অপরাধের শিক্ষা দেওয়া হয়।

তবে, এই গ্রামগুলিতে গিয়ে অপরাধীদের ধরাটা পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জের। এই গ্রামে গেলে পুলিশকে বিশাল বাহিনী নিয়ে যেতে হয়। এখানকার মহিলারাও এর সঙ্গে যুক্ত। বাইরের কাউকে দেখলেই তাঁরা বধির সেজে থাকেন। যদি কোনও অজানা ব্যক্তি গ্রামে আসে, বাসিন্দারা সতর্ক হয়ে যায়। বিশেষ করে মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা দেখলে তো কথাই নেই।