• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

খতম গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে

আটদিন ধরে তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাকে হাতে পাওয়ার পরেও এনকাউন্টার করতে হল বিকাশ দুবে'কে।

এনকাউন্টারে খতম গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে। (Photo: IANS)

আজ থেকে নয়, গতকয়েক বছর ধরেই উত্তরপ্রদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী সে। অসংখ্য খুনের মামলা তার বিরুদ্ধে। কানপুরের ত্রাস বিকাশ দুবের অঙ্গুলিহেলনে নড়ে যোগীর রজ্যের মাফিয়া জগৎ। গত সপ্তাহে আট পুলিশকর্মীকে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার পর সব সীমা পার করে ফেলেছিল সে। প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল।

আটদিন ধরে তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাকে হাতে পাওয়ার পরেও এনকাউন্টার করতে হল তাকে। কারণ কনভয়ের গাড়ি উল্টে যাওয়ার পর পুলিশের পিস্তল নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিকাশ দুবে । এই ঘটনাক্রমকে অনেকেই সাজানো এবং অতিনাটকীয় বলে দাবি করছেন অনেকে।

প্রশ্ন উঠেছে, এতবড় একজন অপরাধীকে ধরার পরেও সে যদি পালিয়ে যায়, তাহলে কি পুলিশের ব্যর্থতা হিসাবে প্রতিপন্ন হবে না? একটি সূত্রের খবর, পালিয়ে থাকার সময় তিন তিনবার নিজে থেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বিকাশ। আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল সে। নয়ডা পুলিশ, দিল্লি পুলিশ এবং রাজস্থান পুলিশ— তিন জায়গা থেকেই নাকি ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

এরপরে উজ্জয়িনীতে কোনও এক তিওয়ারির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিকাশ। এই তিওয়ারির ভাই আবার কানপুরের বড় ব্যবসায়ী। এই তিওয়ারিই বিকাশকে মহাকাল মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা বানিয়ে দিয়েছিল। সেখানেই বিকাশকে ধরে পুলিশ। তবে তার গ্রেফতারির পর থেকেই উঠছে নানা প্রশ্ন।

একাংশের মতে, এটা ছিল পরিকল্পিত আত্মসমর্পণ। ইচ্ছে করেই মহাকাল মন্দিরকে বেছে নিয়েছিল বিকাশ। যেন ভিড়ের মধ্যে তাকে এনকাউন্টার করতে না পারে পুলিশ। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা কিন্তু আবার অভিযোগ উঠেছে, গ্রেফতারের পর পুলিশই তাকে এনকাউন্টারের পরিকল্পনা করে।

কারণ এত বছর ধরে যে অপরাধের জাল বিকাশ বুনেছিল তাতে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলেরও অনেকের যোগ ছিল বলে ধারনা অনেকের। ফলে বিকাশ ধরা পড়লে বিপজ্জনক কোনও তথ্য সামনে চলে আসতে পারত। যা হয়তো নানা মহলে অস্বস্তির কারণ হত। সে কারণেই কি শেষ করে দেওয়া হল বিকাশ দুবে’কে? এই প্রশ্নই ঘুরছে নেটদুনিয়ায়।

বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ যেমন ট্যুইট করেছেন, উঁচু তলার রাজনীতিকদের সঙ্গে বিকাশের যোগ যাতে সামনে চলে না আসে, সে জন্যই খুন করা হয়েছে তাকে। বৃহস্পতিবার সকালে উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির থেকে গ্রেফতার হয়েছিল নিপুরের কুখ্যাত গ্যাংস্টার বিকাশ।

মধ্যপ্রদেশ পুলিশ গতকাল সন্ধ্যায় তাকে তুলে দেয় উত্তরপ্রদেশের এসটিএফের হাতে। বিকাশকে উজ্জয়িনী থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল উত্তরপ্রদেশের শিবলিতে। শুক্রবার সকালে কানপুরের কাছে এসে উল্টে যায় গাড়িটি। পুলিশ জানিয়েছে ওই গাড়িতেই ছিল বিকাশ। গাড়ি উল্টে যাওয়ার পর পুলিশের পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে সে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে গুলিও চালায় সে। দু’পক্ষের সঙঘর্ষে মৃত্যু হয় গ্যাংস্টারের।

এই এনকাউন্টারের বর্ণনা অনেকের কাছেই অতিনাটকীয় ঠেকেছে। আর সেই জায়গা থেকে প্রশ্ন উঠছে, বিকাশকে জেরায় যাতে অপ্রিয় সত্য বেরিয়ে না আসে। সেই কারণেই কি আত্মসমর্পণ করার পরেও খুন করতে হল তাকে? অখিলেশ যাদব যেমন সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন- আসলে কনভয়ের গাড়ি উল্টোয়নি। সরকার উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাতেই এমনটা করানো হয়েছে।

আট পুলিশকর্মীকে খুন করে ফেরার থাকার সময় ছদিন ধরে মোট পাঁচটি রাজ্য ঘুরে মধ্যপ্রদেশে পৌঁছেছিল বিকাশ। পুলিশের আঁটোসাটো নিরাপত্তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক রাজ্য থেকে অন্যত্র দাপিয়ে বেরিয়েছে সে। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, বিকাশ দুবে’র সিনেমা শেষ হল। এই সিনেমার ডিরেক্টর কে? প্রডিউসার কে? কেই বা সিনেমা বানাতে টাকা জোগালো— এগুলো কেউ জানতে পারবে না। এটা আসলে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার রাজনীতি।