শিশু পর্ণোগ্রাফি নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিল দেশের শীর্ষ আদালত। চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি বা শিশু পর্ণোগ্রাফি দেখা এবং ডাউনলোড করা পকসো আইন ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
এরপাশাপাশি আইনে পরিবর্তন এনে ‘শিশু পর্ণোগ্রাফি’ শব্দটি সংশোধন করে একে ‘চাইল্ড সেক্সুয়ালি অ্যাবিউসিভ অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেটিভ মেটিরিয়াল’ হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়ে সংসদকে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। অন্যান্য আদালতকেও ‘শিশু পর্ণোগ্রাফি’ শব্দটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার মাদ্রাজ হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দেয়। মাদ্রাজ হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছিল যে, পকসো আইন এবং আইটি আইন (৬৭বি ধারা) অনুযায়ী, অভিযুক্ত যদি শিশু পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কোনও কিছু তৈরি, কাউকে পাঠানো বা ছেপে প্রকাশ করে থাকেন, তবেই তিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন, নয়তো হবেন না। অর্থাৎ শিশু পর্ণোগ্রাফি ডাউনলোড করা এবং দেখা যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের রক্ষার জন্য যে পকসো আইন রয়েছে তার, এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় অপরাধ নয়। যদিও এই ধরনের ভিডিও ডাউনলোড করা ও দেখার প্রবণতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মাদ্রাজ হাই কোর্টের বিচারপতি ভেঙ্কটেশ।
সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাল্টা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন দায়ের হলে, মাদ্রাজ হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণকে ‘ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যা দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন রোখার লক্ষ্যে হাই কোর্টের রায় সোমবার খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত।এদিন এই মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ শিশু পর্ণোগ্রাফি এবং তার আইনি পরিণতি সম্পর্কে কিছু নির্দেশিকা দেয়। বেঞ্চ বলে, আমরা শিশু পর্ণোগ্রাফির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সম্পর্কে বলেছি। মাদ্রাজ হাই কোর্টের রায় ‘গুরুতর ত্রুটিযুক্ত’। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘বর্তমান সময়ে পর্নোগ্রাফি দেখার মতো ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন শিশুরা। আমাদের সমাজকে সেভাবে গড়তে হবে যাতে শাস্তির বদলে শিক্ষা দেওয়া যায়।’ পাশাপাশি এদিন আদালত রায়ে স্পষ্ট জানায়, শিশুদের যৌনতার ভিডিও প্রকাশ করা, শেয়ার করা, এই ধরনের ভিডিও তৈরি বা ডাউনলোড করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রসঙ্গত, ২৮ বছরের একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁর মোবাইল ফোনে শিশুদের নিয়ে পর্ণোগ্রাফিক কনটেন্ট ডাইনলোড করার অভিযোগে ফৌজদারি ধারা আনার দাবিকে গত ১১ জানুয়ারি বাতিল করেছিল মাদ্রাজ হাইকোর্ট। সোমবার শীর্ষ আদালত রায় ঘোষণার সময় বলে যে, ওই মামলার ফৌজদারি কার্যধারা পুনরুদ্ধার করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ জানায়, দায়রা আদালত এখন নতুন করে এই মামলাটি দেখবে ।
এছাড়াও আদালত এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘শিশু পর্নোগ্রাফি’ শব্দটি সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছে। শিশু পর্ণোগ্রাফি শব্দটির বদলে শিশু যৌন নিপীড়নমূলক এবং শোষণমূলক বিষয়’ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আইন সংশোধন করতে বলেছে। একইসঙ্গে দেশের সমস্ত আদালতকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, এখন থেকে যেন ‘শিশু পর্নোগ্রাফি’ শব্দটি কোনও মামলায় ব্যবহার করা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।